বাংলাদেশ কারও তালুকদারি নয়: মির্জা আব্বাস
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৭:৪৭ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৫

‘বাংলাদেশ কারেও তালুকদারি নয়’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে শাহজাহানপুর বিএনপির এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নির্বাচন বিলম্ব নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে ইঙ্গিত করে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। আজকে যখন ভোটের সময়ে আসছে, এখন বলেন এটা না করলে ভোট হবে না, ওটা না করলে ভোট হবে না… কেন রে ভাই কেন?’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো দেশটাকে বাপের তালুকদারি ভেবেছিল—যার কারণে যা খুশি তাই হয়েছে। আপনারাও কি তা-ই ভাবেন? এই বাংলাদেশ কারও তালুকদারি নয়। এই বাংলাদেশ জনগণের। সুতরাং, কথাবার্তা বলার সময়ে হিসাব করে বলবেন। যাতে আমাদের বেহিসাবি কথা বলতে না হয়।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনেকের ভেতরে কিছু লোভী রাজনীতিবিদ আছেন, কিছু লোভী রাজনৈতিক দল আছে, যারা শুধু বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা করে। কার্য্কর কোনও বিরোধিতা নয়। এই দলগুলো পাকিস্তান সৃষ্টির লগ্ন থেকে, ভারত বিভক্তি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত শুধু বিরোধিতাই করে গেলো। দেশপ্রেমের লেশমাত্র তাদের ভেতরে নাই। তারা দেশকে ভালোবাসে না, দেশের মানুষকে ভালোবাসে না।’
‘তারা ভালোবাসে যেভাবে হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে, যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে হবে। আমাদের তো আপত্তি নেই—দেশের মানুষ যদি ভোটের মাধ্যমে আপনাদের ক্ষমতায় নেয়, আপত্তির কী আছে? ভোটে আসেন। ভোটকে ভয় পান কেন? নির্বাচনকে ভয় পান কেন?’
নির্বাচনের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘যারা লম্বা লম্বা কথা বলেন আজকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তারা বুকে হাত দিয়ে বলেন—এই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আপনাদের ক’জন নেতাকর্মী শাহাদাতবরণ করেছেন? বিএনপির ৪২২ জন নেতাকর্মী শাহাদাতবরণ করেছেন, শহীদ হয়েছেন এক মাসে। আপনাদের কয়জন হয়েছে?’
রাজধানীর ঢাকা মহানগরের দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে শাহজাহানপুর রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে বিএনপির উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র কাঠামোর মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়।
‘গণমাধ্যমের সমালোচনা’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা আজকাল অনেক দলের কথা পত্র-পত্রিকায় লেখে না, অনেক দলের খারাপ কথা লেখে না, ভালো কথা হয়তো লেখে দুই-একটা।’
‘আর বিএনপির ভালো কথা লেখে না। খারাপ দুই-একটা লিখে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘একটা কথা আছে না… সব পাখি মাছ খায় দোষ পড়ে মাছরাঙার। এখন বিএনপির বিরুদ্ধে বলতে সহজ। মরহুম সাইফুর রহমান সাহেব বলতেন, সিলেটি ভাষায় বলতেন—হাড্ডির পাশের মাংস খাইতে খুব মজা লাগে। বিএনপির একটি বড় দল, গোছানো দল, সুন্দর দল—এই দলের বদনাম করতে খুব মজা লাগে মানুষের।’
‘বিভিন্ন দল একযোগে, বিভিন্ন টেলিভিশন একযোগে, বিভিন্ন ইউটিউবার একযোগে বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে। এগুলোকে প্রতিরোধ করতে হবে আমাদের কাজের মাধ্যমে। জনগণের পাশে থেকে তাদের বোঝাতে হবে বিএনপি ছাড়া এ দেশের মানুষের কোনও বন্ধু নাই।’
‘চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করুন’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে অনেক বদনাম করতেছে কিন্তু ওই লোকগুলো। অপকর্ম করে তারা, চাঁদাবাজি করে তারা, দুষ্কর্ম করে তারা, চাপিয়ে দেয় বিএনপির ওপরে। এসব চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে মুখের কথা অথবা কাজে।’
‘যদি না করেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বারবার বলেছেন, যদি জনগণের মন থেকে উঠে যান… আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে, তার চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। সাবধান থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সবার নামে না, দুই-একজনের নামে অভিযোগ আছে। আমার একটা এলাকায় একশত কর্মী আছে, দুইটা কর্মী খারাপ, বদমাইসি-অপকর্ম করে। কিন্তু আমার ৯৮ জন কর্মী তো খারাপ না। সুতরাং, দুজন লোকের জন্য আমার সব কর্মী কালিমালিপ্ত হবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না।’
‘যদি কোনও চাঁদাবাজ ঢুকে পড়ে কিংবা আসে… অনেক চাঁদাবাজ কিন্তু আওয়ামী লীগ… এখন দলের মধ্যে আছে। সব দলেই বিএনপিতে আছে, জামায়াতে আছে এবং অন্যান্য সংগঠনের ঢুকে গেছে তারা। সব দলে কম-বেশি আশ্রয় নিয়ে নিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করেন, চিহ্নিত করে ওদের দল থেকে বের করে দেন, অথবা পুলিশে সোপর্দ করেন।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ওরা ঢুকতে পারে, কিন্তু চিহ্নিত করে একটা একটা করে দল থেকে বের করে দেবেন, দলে ওদের অবস্থান হবে না।’
‘বিএনপিতে কোনও অপকর্মকারী, কোনও দুষ্কৃতকারী, কোনও চাঁদাবাজের জায়গা নাই, হবে না, কেন খারাপ লোকের জায়গা বিএনপিতে হবে, এই কথা মনে রাখবেন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় মহানগরের নেতারা বক্তব্য রাখেন।