‘এক রুমে বন্দি’ থেকে মুক্ত খালেদার সাত বছর পর পরিবারের সাথে ঈদ
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:৫৫ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৫

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্বস্তিতে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি বিএনপির নেতাকর্মীরা। কখনও হামলা বা মামলার ভয়ে বাড়ি-ঘর ছাড়া, আবার কখনও কারাগারেই করতে হয়েছিল ঈদ। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সুদিন ফিরতে শুরু করেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। এবার তারা স্বস্তিতে ঈদ উদযাপন করবেন। বিগত বছরগুলোর মতো এবার আর দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকেও ‘এক রুমে বন্দি’ অবস্থায় ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে না।
নির্জন কারাবাস থেকে গৃহবন্দি, দীর্ঘ সাত বছর পর এবারই পুরোপুরি মুক্ত হয়ে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে ঈদ উদযাপন করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার অবর্তমানে ঢাকায় ঈদ উদযাপন করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, ঢাকায় যখন ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে তখন লন্ডনে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ।
বিএনপি রচেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। তখন তিনি তিন মাস বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। ওই বছরের ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদযাপন করেন। দীর্ঘ সাত বছর পর আবার নিজ পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের কর্মকর্তারা জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেখানে ৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলে তার। বর্তমানে তাকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, লন্ডনে তারেক রহমানের পরিবার ছাড়াও আছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও তার দুই মেয়ে। তাই এবার তিনি ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন ছেলে, ছেলেদের স্ত্রী ও নাতনিদের সঙ্গে।
২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন খালেদা জিয়া। তাকে নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। ওই বছরে দুটি ঈদ কারাগারে একটি কক্ষে গৃহকর্মী ফাতেমার সঙ্গে কাটে তার। কারাগারে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করতে পেরেছিলেন।
২০১৯ সালে কারাবন্দি অবস্থায় রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। সেখানে একটি কক্ষে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই কক্ষেই তার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা কাটে। তখনও তার সঙ্গী ছিলেন ফাতেমা। হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য সাক্ষাতের অনুমতি পেয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মুখে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন সরকারপ্রধান নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেন খালেদা জিয়াকে। ফলে করোনার মধ্যে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় কোয়ারেন্টাইন মেনে এক কক্ষের মধ্যে ওই বছরের দুটি ঈদ কাটে তার। ২০২১ সালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এভার কেয়ার হাসপাতালের কেবিনে ঈদুল ফিতর কাটে খালেদা জিয়ার। আর ঈদুল আজহা কাটে ফিরোজায়।
একই নিয়মে ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে গৃহবন্দি অবস্থায় ফিরোজায় ছয়টি ঈদ উদযাপন করেন খালেদা জিয়া। সেখানে তার সঙ্গে ঈদ করতে কয়েকবার লন্ডন থেকে দেশে এসেছিলেন ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান ও তার দুই কন্যা। এ ছাড়া ঈদের দিন দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার ঈদ উদযাপন প্রসঙ্গে দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘সর্বশেষ ২০২৪ সালের ঈদে আসতে পারেননি সৈয়দা শর্মিলা রহমান। এ ছাড়া এর আগের সবগুলো বছর ঈদের আগে কিংবা পরে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন এবং শাশুড়ির সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন। অনেক সময় তার দুই মেয়েও দাদির সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকায় এসেছিলেন।’
এপ্রিলে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া:
উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। গত তিন মাস সেখানে অবস্থান করলেও কবে নাগাদ তিনি দেশে ফিরতে পারেন তা নিয়ে দল কিংবা পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানানো হয়নি। তবে, আগামী এপ্রিল মাসের যে কোনো সময়ে তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে জানা গেছে।
শায়রুল কবির খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেনর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ম্যাডামের আসার বিষয়ে এখনও কোনো তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। তবে, তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে দ্রুত দেশে ফেরার ইচ্ছা রয়েছে তার।’
এবার খালেদা জিয়ার লন্ডনে ঈদ উদযাপনের কারণে ঢাকার নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। লন্ডনে ঈদের দিন তার কোনো কর্মসূচি নেই বলেও জানা গেছে।
শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ঈদের দিন লন্ডনে ম্যাডামের রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি না থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।’
ঢাকায় ঈদ করবেন স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য, অন্যরা এলাকায়:
এবার ঈদুল ফিতরের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য ঢাকায় অবস্থান করবেন। দলের অন্যান্য নেতাকর্মী ঈদ করতে ইতোমধ্যে নিজ-নিজ সংসদীয় আসনে চলে গেছেন। ঈদ করে তারা আবার ঢাকায় ফিরবেন।
ঈদের দিন সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এরপর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মির্জা ফখরুল।
জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ডাক্তার জাহিদ হোসেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে আছেন। আর মঈন খান আমেরিকায় এবং আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ঈদ উদযাপন করবেন।
শায়রুল কবির বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির নেতারা ছাড়া অন্য নেতাকর্মীরা নিজ-নিজ এলাকায় ঈদ করবেন।’