
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম যদি মানুষের প্রয়োজন না মেটাতে পারে, তাহলে সে সংস্কার কোনো কাজে আসবে না। সংস্কারের নামে নতুন নতুন চিন্তাভাবনাই সমস্যা সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন নতুন চিন্তা আসছে, যেগুলো এই দেশে পরিচিত নয়। সংসদে আনুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচন দেশের মানুষ বোঝেই না। পিআর কী জিনিস? জনগণ এখনও ইভিএমে ভোট দিতে পারে না, বোঝে না। সুতরাং পিআর চিন্তাভাবনা থেকে দূরে সরে যেতে হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ মাঠে ‘গণতান্ত্রিক পদযাত্রায় শিশু’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এবং ‘মায়ের ডাক’ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের সময় গুমের শিকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া শিশুদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ অনুষ্ঠান করা হয়।
এতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, একটি কমিশন করা হয়েছে। এই কমিশন একটি প্রতিবেদন করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে খুব বেশি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। আমরা আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকার শিশুদের (গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্তান) পুনর্বাসনের জন্য একটি স্পেশাল সেল গঠন করবে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কাজটি হয়নি। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে এই শিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করবে।
গুমের শিকার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীরও এতে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে গুম হওয়াদের পরিবারের শিশুরা অসহ্য মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছে। তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর উত্তরায় শহীদ শিশু জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে অনেক শিশু মারা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এসব নিয়ে কিছু করেনি। আমি চাই, সারাদেশ শহীদ শিশুদের চিনুক।’ গুমের শিকার নুর হোসেনের মেয়ে নাবিলা নুর বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি। আমি বাবাকে পাইনি। বাবাকে গুম করার একটাই কারণ ছিল, তিনি বিএনপি করতেন।’
গুমের শিকার কায়সার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার বলেন, ‘১২ বছর হলো আমি বাবাকে দেখি না। বাবাকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি একটু পানি চেয়েছিলেন, সেটাও দেওয়া হয়নি। আমার বাবাসহ গুমের শিকার সবার খোঁজ চাই।’
মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমের ব্যাপ্তি অনেক বড় ছিল। যারা পিতা-মাতাকে হারিয়েছেন, তাদের কষ্টের জায়গা এক। তাই আমরা একসঙ্গে হয়েছি। আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এ ছাড়া বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসানসহ গুমের শিকার বিভিন্ন ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা।