
নির্বাচনকে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখা একটি গুরুতর ভ্রান্ত ধারণা বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার। তার মতে, গণতন্ত্রের প্রকৃত অর্থ জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছার বাস্তবায়নে নিহিত, নির্বাচনের সঙ্গে এর সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
সোমবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, “যদি আমরা কিছু করতে চাই, তাহলে দয়া করে নির্বাচনের ধারণাটা বাদ দেন। নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র এটা মারাত্মক ভুল। নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন মানে গণতন্ত্র, এই ভুয়া তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়িত করা। এটার আরেকটা নাম আছে, সেটা হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব।”
তিনি ব্যাখ্যা করে আরও বলেন, জনগণের কাঠামোগত ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া যায় না; আন্দোলনসহ বিভিন্ন উপায়ে জনগণ তাদের এই ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখে।
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, “এখন সমস্যা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাকে যেখানে দিয়েছেন, পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলো রয়ে গেছে। যেহেতু আমরা শেখ হাসিনার রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রেখেছি, সেই রাষ্ট্রটা এখনো আছে। ফলে সেই রাষ্ট্রটি আপনার সামনে দানবের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এটাকে আপনি ভাঙতে পারছেন না। আপনি (ড. ইউনূস) বলছেন এটাকে সংস্কার করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি নতুন গণপরিষদ গঠন করা এবং সেই গণপরিষদের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করে সাংবিধানিক, আইনি ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্নগুলোর সমাধান করা। তার মতে, সহজ সমাধানগুলোকে জটিল করে ফেলার কারণে জাতি বারবার দিকভ্রান্ত হয়।
ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “জনগণকে বলতে দেন তারা কেমন বাংলাদেশ চায়। জনগণকে ক্ষমতা দেন। এটা না করে আপনি দু-তিনটা লোক নিয়ে এসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করলেন। এটার তো কোনো ভ্যালিডিটি নেই। আপনাদের কোনো এখতিয়ারই নেই।”
এই আলোচনায় ফরহাদ মজহার বারবার জোর দিয়ে বলেন, গণতন্ত্রকে নির্বাচনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং জনগণের প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে।