
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর সকালে তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমান সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে ফ্লাইটটি অবতরণ করে, পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে ল্যান্ডিং সম্পন্ন হয়।
তারেক রহমানের সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। সিলেটে যাত্রাবিরতির পর তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। তাকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থান নেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সকাল ১০টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশ করেন। সেখানে উপস্থিত রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান এবং বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলসহ সিনিয়র নেতারা।
এদিকে, বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি সিলেটে প্রায় এক ঘণ্টা গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ড শেষে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার কথা রয়েছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ফ্লাইটটির হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট।
এর আগে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৬ মিনিটে, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৩৬ মিনিটে, লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সপরিবারে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন তারেক রহমান। তিনি বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-২০২ বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯০০ উড়োজাহাজে করে লন্ডন হিথ্রো থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় আসছেন।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উচ্চপদস্থ যাত্রী থাকায় ফ্লাইট পরিচালনায় বিশেষ সমন্বয় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফ্লাইটে তারেক রহমানের জন্য নির্দিষ্টভাবে A1 সিট বরাদ্দ ছিল।
বিএনপি সূত্র জানায়, একই ফ্লাইটে রয়েছেন তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সচিব আব্দুর রহমান সানি, দলের প্রেস উইংয়ের সালেহ শিবলী, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কামাল উদ্দীন, সৈয়দ মইনউদ্দিন আহমেদ ও তাবাসসুম ফারহানা।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে, যা ৩০০ ফিট সড়ক নামে পরিচিত, সেখানে গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে বিএনপি। কুড়িল মোড়সংলগ্ন সড়কের উত্তর পাশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠের কাঠামোয় নির্মাণ করা হয়েছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুট আকারের একটি বিশাল মঞ্চ।
ঢাকায় পৌঁছানোর পর শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফুল দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি সরাসরি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ের সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে তার। পরে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কাকলী মোড় অতিক্রম করে গুলশান ২ নম্বরের বাসভবনে ফিরবেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ১৮ মাস কারাবন্দী ছিলেন তারেক রহমান। মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সপরিবারে লন্ডনে যান তিনি। ওই বছরের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একাধিক মামলার কারণে তার দেশে ফেরা আর সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।