
অনৈক্য কিছু নেই, আছে স্বার্থের সংঘাত: মির্জা আব্বাস
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য কিছু নেই, আছে স্বার্থের সংঘাত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেকটা দলের নিজস্ব আদর্শিক জায়গা ও মতাদর্শ আছে। সবাই যার যার মতাদর্শ থেকে কথা বলে। এটাকে আমি অনৈক্য বলবো না। তবে দলগুলোর মধ্যে স্বার্থের সংঘাত আছে।’ বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে স্বাধীনতা দিবসে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন। তিনি এও বলেন, ‘যদি কখনও এমন সময় আসে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। তখন কিন্তু আমরা সবাই এক হয়ে যাব। এখানে কোনো ভুল নাই। এখন দলীয় আদর্শিক স্বার্থে হয়তো আলাদা কথা বলছি। কিন্তু যখন জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন হবে, তখন বাংলাদেশের জনগণ এক হয়ে যাবে।’ মির্জা আব্বাস আরো বলেন, ‘আজকে স্মরণ করছি স্বাধীনতার ঘোষক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, অতঃপর দেশে থেকে যুদ্ধ করে তিনি দেশকে স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ মাঝে আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। গত ৫ আগস্টের পর আবার নতুন করে পেয়েছি। আমি স্বাধীনতার ৭১-এর বীর শহীদ যারা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করে দিয়েছিলেন, রক্তের বিনিময়ে যারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, তাদের স্মরণ করছি। তাদের পরিবারের যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আজকের এই দিনে দেশবাসীকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্র কিছু দিন আগে জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন করে স্বৈরাচারকে তাড়িয়ে একটা নতুন স্বাদ পেয়েছি। অনেকে বলে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। আসলে আজকে স্বাধীনতা দিবস প্রমাণ করে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নাই। যারা বলে তারা আজকের স্বাধীনতা দিবসে খাটো করতে চায়, ৭১-এর স্বাধীনতায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। সুতরাং এই দিনটাকে তারা খাটো করতে চায়।’ মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘আজ খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চাইব এবং এই স্বাধীনতাকে যেন ধরে রাখতে পারি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে এই স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে পারে এজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া কামনা করবো।’ এ সময় জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি, বিএনপির নেতা আমানুল্লাহ আমান উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ বিএনপি
ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ বক্তব্যকে ‘অস্পষ্ট’ অভিহিত করে অবিলম্বে ‘স্পষ্ট রোড ম্যাপ’ দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির মহাসচিব এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এটা (ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে) ভেগ। এটা অত্যন্ত অস্পষ্ট কথা। ডিসেম্বর থেকে জুন, ছয় মাস। কোনো রোড ম্যাপ দেওয়া হয়নি।’ ‘আমরা বারবার বলে আসছি যে, স্পষ্ট রোড ম্যাপ এবং দ্রুত নির্বাচন। তা না হলে যে সংকটগুলো সৃষ্টি হচ্ছে, এ সংকটগুলো কাটবে না।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা… বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনের কথা বলছে না। বিএনপি জাতির স্বার্থে, জাতিকে রক্ষা করার স্বার্থে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার স্বার্থেই নির্বাচনের কথা বলছে। নির্বাচিত পার্লামেন্ট এবং সরকারের কথা বলছে।’ ‘আমরা আশা করবো, অন্তর্বর্তী সরকার অতি দ্রুত ন্যূনতম সংস্কারগুলো করে অর্থাৎ যেগুলো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন, তা সম্পন্ন করে নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন।’ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় মির্জা ফখরুল ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতাকর্মী জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে আসেন। প্রয়াত নেতার কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করে তারা ফাতেহা পড়েন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে হতাশ: মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি অত্যন্ত হতাশ হয়েছি যে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য রেখেছেন সেই বক্তব্যে তিনি নির্বাচনের রোড ম্যাপের কথা বলেননি।’ ‘আমরা হতাশ হয়েছি যে, তার বক্তব্যের মধ্যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের নাম এক বারও উচ্চারণ করেননি। অথচ এটাই ছিল ইতিহাস।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আবারও চাই না, আওয়ামী লীগ যে ইতিহাস বিকৃত করেছে, এখন আবার সেই ইতিহাস বিকৃতি হোক। প্রকৃত সত্য উদঘাটিত করে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, একটি গণতান্ত্রিক সরকার- সেই গণতান্ত্রিক সরকারে যত দ্রুত ফিরে যাওয়া যাবে আমাদের সমস্যাগুলো তত দ্রুত সমাধান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

একাত্তর আর চব্বিশ আলাদা কিছু নয়: নাহিদ ইসলাম
একাত্তর আর চব্বিশ আলাদা কিছু নয়, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একাত্তরের চেতনা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বুধবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এ কথা বলেন। নাহিদ ইসলামের অভিযোগ, যারা একাত্তর আর চব্বিশকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করাতে চায় তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। নাহিদ আরও বলেন, ‘ক্ষমতায় বসার জন্য যদি নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হয় তা মানা হবে না।’ একদিকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে বলেও জানান নাহিদ এছাড়া সংবিধান আঁকড়ে রেখে পুরোনো বন্দোবস্তেই দেশকে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ নাহিদ ইসলামের। এর আগে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এনসিপি নেতারা।

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ভেক কথা, অস্পষ্ট কথা। এটা কোন রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি। বিএনপি বারবার বলেছি নির্বাচনী রোডম্যাপ দেয়ার জন্য। না হলে দেশের সংকট কাটবে না।’ বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের কথা বলে ক্ষমতায় যেতে নয়, জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য। নির্বাচিত সরকারই পারে সংকট সমাধান করতে।’

সংস্কার ও বিচারবিহীন নির্বাচন মেনে নেয়া হবে না: নাহিদ ইসলাম
সংস্কার ও বিচার ছাড়া কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করা হলে জনগণ মেনে নেবে না, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের প্রতিহত করবে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বুধবার (২৬ মার্চ) সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ৭১’-এর বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সামনের দিনে আর যেন রক্ত দিতে না হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিনির্মাণ করতে চাই। ৭১ এবং ২৪ আলাদা কিছু না। একাত্তরে যা চেয়েছিলাম চব্বিশে তা অর্জন হয়েছে। যারা এটাকে পরস্পরবিরোধী করছে তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।’সংস্কার ও বিচারবিহীন নির্বাচন দেয়া হলে তা মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরানো সংবিধান চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদকে আবার পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দ্রুত নির্বাচন দেয়ার পাঁয়তারা চলছে।’নাহিদ আরও বলেন, ‘৭১’-এর স্বাধীনতা ও ২৪’-এর স্বাধীনতা পরস্পর বিরোধী নয়। সংস্কার ও বিচার ছাড়া কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করলে জনগণ মেনে নেবে না। তাদের প্রতিহত করবে এনসিপি।’

সুব্রত চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ফুসফুসের প্রদাহে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ল্যাবএইড হসপিটালে ভর্তি হন তিনি। বর্তমানে ওই হাসপাতালের ড. বরেন চক্রবর্তী তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন। গণফোরামের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মধু বলেন, সুব্রত চৌধুরী এখন সিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

এখন সুযোগ এসেছে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা নিশ্চিত করার : তারেক রহমান
ফ্যাসিবাদের পতনের পর এখন সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা নিশ্চিত করার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক বাণীতে তিনি কথা বলেন। তারেক রহমান সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে নবীন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। হাজার বছরের সংগ্রাম মুখর এ জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আজকের এই দিনে আমি দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশীসহ সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তারেক রহমান বলেন, এই স্বাধীনতা দিবসে আনন্দের মুহূর্তের মধ্যে প্রথমেই যে কথা মনে পড়ে, তাহলো এ দেশের অগণিত দেশপ্রেমিক শহীদের আত্মদান। আমি এ মহান দিনে তাদের গভীর শ্রদ্ধা জানাই। যাদের অবিস্মরণীয় আত্মদানে অর্জিত হয়েছে দেশমাতৃকার মুক্তি। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমসহ সকল জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি আমি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তিনি আরও বলেন, যাদের জীবন মরণ লড়াইয়ে ৯ মাসে আমরা বিজয় লাভ করেছি সেইসব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা জাতি কখনোই বিস্মৃত হবে না। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেসব মা-বোনদের কথা, যারা মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। স্বাধিকার আর স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রক্তস্নাত পথে বিশ্ব মানচিত্রে উদ্ভাসিত হয় আমাদের মানচিত্র। এদিনে দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তার ঐতিহাসিক ঘোষণায় সেই মুহূর্তে দিশেহারা জাতি পেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অভয়মন্ত্র। একটি শোষণ, বঞ্চনাহীন, মানবিক সাম্যের উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এ দেশের মানুষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে গণতন্ত্র বিনাশী শক্তির চক্রান্ত এখনও থেমে নেই। বারবার ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী ও অবৈধ শক্তি আমাদের সে লক্ষ্য পূরণ করতে দেয়নি। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফলে আমাদের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি হোঁচট খেয়েছে এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চক্রান্তমূলকভাবে হত্যার পরে বেগম খালেদা জিয়ার সফল ও সার্থক নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ধারা সূচিত হলেও গণতন্ত্রের শত্রুদের কারণে স্থায়ী ও মজবুত গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

কিছু কিছু দল বোঝানোর চেষ্টা করছে মুক্তিযুদ্ধ কোনো ঘটনাই ছিল না : মির্জা ফখরুল
যেসব দল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছিল তারা এখন গলা উঁঠিয়ে কথা বলা চেষ্টা করছে যেন ওই সময় (৭১ সালে) কিছু হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কিছু-কিছু দল বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ১৯৭১ (মুক্তিযুদ্ধ) কোনো ঘটনাই ছিল না। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি) ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। মির্জা ফখরুল বলেন, ২৫ মার্চের এই কালো দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এই দেশের মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছে লাখো নিরীহ মানুষ। কিন্তু সেই গণহত্যার জন্য পাকিস্তান এখনও ক্ষমা চায়নি। এ কথাগুলো এখন কেন বলছি, কারণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে, কিছু-কিছু মানুষ, একটি গোষ্ঠী ও কিছু-কিছু দল বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ১৯৭১ (মুক্তিযুদ্ধ) কোনো ঘটনাই ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের যে আন্দোলন, লাখ-লাখ মানুষের যে আত্মত্যাগ, ৯ মাস ধরে বাড়ি-ঘর ছেড়ে কোটি-কোটি মানুষ যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল সেই অবস্থা যেন আমরা ভুলে যাচ্ছি। যারা সরাসরি সহযোগিতা করেছে, সরাসরি হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছে তারা এখন গলা উঁচিয়ে- ফুলিয়ে কথা বলছে। কারও নাম বলতে চাই না, তিক্ততাও সৃষ্টি করতে চায় না। তিনি বলেন, ইতিহাস তো ইতিহাসই, কেউ বিকৃত করতে পারবে না। সেই জন্য আজকের এই রাত্রি (২৫ মার্চ) অত্যন্ত কলঙ্ক ও দুঃখময় রাত্রি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাসী না, তারা গণতন্ত্র ধ্বংসকারী। তাই আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্রের সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারেনি। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে, এটাই এদের চরিত্র বলে উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ওরা দেখে, জনগণ যখন ক্ষেপে উঠে, তখন ওরা এভাবে কর্মীদের অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যায়। এবার তাই করেছে, জনতার বিক্ষোভে ভারতে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মহীয়সী নারী বেগম খালেদা প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয় ৯ মাস জেলে ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার প্রথম শুরু হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে, পরে করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের মৌলিক সংস্কার কিন্তু বিএনপির হাতে দিয়েই। এখন ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে তো বিএনপি, ১৬ সালে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০৩০ ভিশন দিয়েছে। সংস্কার কোনো নতুন বিষয় নয়। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের পাহাড় এনেছে। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি, পক্ষে - বিপক্ষে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এটি আজ ষড়যন্ত্র সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। যেটা আমরা মেনে নেব না। কারণ সেনাবাহিনী দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের ভিত্তি তো বিএনপি করেছে। হঠাৎ করেই একটা বিপ্লব হয়নি, বিএনপির নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে উঠে এসেছে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

তামিম ইকবালের জন্য তারেক রহমানের দোয়া প্রার্থনা
অসুস্থ তামিম ইকবালের সুস্থতার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার (২৪ মার্চ) দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার আশু সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’ তারেক রহমান বলেন, ‘ক্রিকেটার তামিম ইকবাল দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, আমি কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি।’

সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করানোর চেষ্টা হচ্ছে: তারেক রহমান
সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে বলেও মনে করেন বিএনপির শীর্ষ এই নেতা। সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে লেডিস ক্লাবে বিএনপি মিডিয়া সেলের উদ্যোগে এক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, ‘এই মাত্র মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) উনার বক্তব্যে যে কথাটি বলেছেন, কোথাও কেউ কিছু একটা হয়তো করার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনী ও জনগণকে মুখোমুখি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এতটুকু বুঝি, এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আমরা সবাই মিলে যদি সচেতন হই, তাহলে অবশ্যই আমরা এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’ তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যে বিষয়গুলো আমাদের আশেপাশে দেখেছি, প্রত্যেকটি মানুষ বাংলাদেশে চায়- এর একটা পরিবর্তন হোক। আমাদের আহ্বান থাকবে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যা করার, সেই সহযোগিতা করতে সক্ষমতা হবে। আমাদের এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় বিতর্কিত করা হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) যদি এই বিষয়গুলো আপনাদের অবস্থান থেকে সত্যভাবে জাতির সামনে তুলে ধরেন, তাহলে আমরা এই ষড়যন্ত্র থেকে। আর জুলাই-আগস্ট মাসে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক স্বৈরাচারকে বিদায় করার জন্য, গণতন্ত্র ও নিজেদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছেন- তাদের এই প্রতিটি মানুষের এই উৎসর্গ যেন স্বার্থক হয়, তার জন্য আমাদের সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে।’ বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন পাভেলের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় বৈঠকের আহ্বান এবি পার্টির চেয়ারম্যানের
চলমান সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু। সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘৫ আগস্টের সময়ের একটি ভিডিওকে সামনে এনে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এটি কোনো সাম্প্রতিক ভিডিও নয়।’ শেখ হাসিনার নির্দেশেই এ ধরণের উস্কানিমূলক গুজব প্রচার করা হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।‘সেনা প্রধানের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যা কথা হয় তা ব্যক্তিগত আলাপ, সেসব জনগণের সামনে এনে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তার সমাধানের দায়িত্ব এ সরকারের।’এছাড়া এনসিপির দুই মুখ্য সংগঠকের ফেসবুক পোস্ট করার ক্ষেত্রে আরও কৌশলি হওয়ার কথা বলেন মজিবুর রহমান।

দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জামায়াত আমিরের
যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল দেশকে আবার অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে এবং পতিত স্বৈরাচারকে ফিরে আনার অপতৎপরতা শুরু করেছে। এমন অবস্থায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ, সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। শান্তি-স্বস্তির নতুন বাংলাদেশ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। সোমবার (২৪ মার্চ) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে জামায়াত আমির বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতা দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তদানীন্তন শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। ক্ষুধা-দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও দুঃশাসন মুক্ত একটি দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বস্তরের জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আজ দেশের মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি হিসাব করলে দেখা যায় বহু প্রত্যাশা এখনও পূরণ হয়নি। তিনি আরও বলেন, গত জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ আবার নতুন করে দ্বিতীয়বারের মত স্বাধীনতা অর্জন করেছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা জালিমের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশের মানুষ মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছে। দেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছে এবং শান্তিতে-স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছে। পতিত সরকারের দোসররা এবং দেশের কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির সহায়তায় ছাত্র-জনতার এই গণআন্দোলনকে ব্যর্থ করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা মহান স্বাধীনতা দিবসে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করছি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ওই সমস্ত জনতাকে যাদের ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছে। আমরা আরও স্মরণ করছি গত জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনের সব শহীদদের এবং আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের। আমরা সব শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

শেখ হাসিনা রাইফেল দিয়ে ইতিহাস পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থানকারী শেখ হাসিনা জোর করে, রায় দিয়ে, রাইফেল দিয়ে ইতিহাস পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ এই লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করতো। স্বাধীনতার পর থেকে এরা শুরু করেছে লুটপাট, অপকর্ম, দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল মানুষের জীবন। স্বাধীন বাংলাদেশকে অপশাসনের কবজায় নিয়ে ত্রাসের কায়েম করেছিল। জিয়ার সময় মানুষ ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতো। এখনকার মতো বিদেশি কিছু এজেন্ট চক্রান্ত করত তো বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জোর করে, রায় দিয়ে, রাইফেল দিয়ে ইতিহাস পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। ছাত্ররা প্রকৃত ইতিহাস জেনে জুলাই অভ্যুত্থানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশে স্বৈরাচার আসলে টিকে থাকতে পারে না। দূরে থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করে গেছেন নেতৃত্বের মাধ্যমে। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কিছু জিনিসের দাম কমলেও নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল, ডাল ও মুরগির দাম হুহু করে বাড়ছে। এ বিষয়ে লাগাম টেনে ধরা দরকার। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরে রিজভী বলেন, যুগের পর যুগ ধরে ছিনতাইকারীরা রাজত্ব করে যাবে কেন? তাহলে পুলিশ প্রশাসন আছে কেন? সঠিক সময়ে সঠিক কাজ না করতে পারলে জনগণ তো মুখ ফিরিয়ে নেবে। সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা চীনে যাবেন, এটা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে গুজবের মাধ্যমে"। তিনি বলেন, পত্রিকার পাতায় দেখলাম, ইফতার পার্টির নাম করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গোপন বৈঠক করেছে, কী উদ্দেশ্যে, কেন করেছে? যাদের হাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তারাই যদি গোপন বৈঠক করে, তবে এটা ভয়াবহ ব্যাপার। এ সময় বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, জলবায়ু বিষয়ক সহ সম্পাদক বেলায়েত আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সভাপতি ডাঃ জাহিদ হাসান, মৎসজীবী দলের সাবেক সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।

‘জিয়া সাংস্কৃতিক জোট’ ভুয়া সংগঠন: বিএনপি
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘জিয়া সাংস্কৃতিক জোট’ নামে একটি ভুয়া সংগঠন বিভিন্ন প্রতারণা ও অবৈধ কাজ করছে। সোমবার (২৪ মার্চ) দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী দলের এ অবস্থানের কথা জানান। গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রিজভী বলেন, “একটি স্বার্থান্বেষী মহল ‘জিয়া সাংস্কৃতিক জোট’ নামে ভুয়া সংগঠন সৃষ্টি করে বিভিন্নভাবে প্রতারণা ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। ভুয়া সংগঠনটি আগামীকাল ২৫ মার্চ ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘অবৈধ ও ভুয়া সংগঠনটির সব ধরনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সম্পর্ক না রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভুয়া সংগঠনটির সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দেশের কল্যাণে দ্রুত নির্বাচন দিন: আমিনুল হক
অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বছরের মধ্যে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেছেন, ‘সংস্কারের নামে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কারণে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। তাই, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিন।’ রোববার (২৩ মার্চ) দিনব্যাপী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির মোহাম্মদপুর থানা ৩৪, ২৯, ৩১ ও শেরে বাংলা নগর থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে ইফতার বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সময় আমিনুল হক আরো বলেন, ‘গত ছয় মাসে আমরা দেখেছি দেশের কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে এখনও পর্যন্ত স্থিতিশীলতা ফিরে আসে নাই। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। আজকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপকর্ম বেড়েই চলেছে।’ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, চুরি ও ডাকাতি রোধে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও বেশি শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুন্দরভাবে সংস্কারের মাধ্যমেই দেশ পরিপূর্ণভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। আমরা চাই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক, যা সবার জন্যই মঙ্গল।’ এ সময় আমিনুল হক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বৈরাচারের দোসরদের রেখে দেশ পরিপূর্ণ সংস্কার সম্ভব নয় উল্লেখ করে বলেন, ‘পরিপূর্ণ সংস্কার ও স্বৈরাচার মুক্ত করতে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। জনগণের সরকার দরকার। সেই জনগণের সরকারের মাধ্যমেই গত ১৭ বছরের স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিপূর্ণ সংস্কার হবে। দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হবে এবং দেশে পরিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি এ দেশের সাধারণ মানুষের দল। সাধারণ মানুষকে নিয়েই বিএনপির পথচলা। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপি একটি সমৃদ্ধশালী দেশ ও একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায়।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী রেজাউনুল হোসেন রিয়াজ, মো. ইউসুফ, মো. শাহ আলম, মহানগর সদস্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মো. নাসির উদ্দীন, এমএস আহমাদ আলী, তাসলিমা রিতা, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপি আহ্বায়ক শুক্কুর মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মীর মো. কামাল হোসেন, মিজানুর রহমান ইসহাক, মোহাম্মদপুর থানা ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি মাসুম খান রাজেশ, সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান রেজা।

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আসুন আলোচনা শুরু করি, বললেন তারেক রহমান
দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আসুন আমরা আলোচনা শুরু করি। জনগণের যে প্রত্যাশা ও চাওয়া, তাদের যে মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য- সেগুলো আমরা কীভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তার সমাধান বের করি।’ রোববার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বিজয়নগরে ফারস হোটেলে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের উদ্যোগে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে এক ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচার যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিল, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামত করতে হবে। আমাদের রাজনীতি হচ্ছে বাংলাদেশ এবং জনগণকে ঘিরে। আমাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় পুঁজি হচ্ছে এদেশের জনগণ। তাই রাষ্ট্রের এই বিষয়গুলো যদি মেরামত না করি, এদেশ আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারব না। মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জনগণের সমর্থন ছিল বলেই শেখ হাসিনার মতো একজন মাফিয়াকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়েছে। ওই আন্দোলনে জনগণ রাজপথে বেরিয়ে এসে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে। দল-মত-নির্বিশেষে সবাই সমর্থন দিয়েছে। একটি পরিবর্তন হতে হবে সেই প্রত্যাশায় তারা নিজেদের উৎসর্গ করেছে। নিশ্চয় জনগণের সেখানে একটি প্রত্যাশা আছে। কেনো তারা এই পরিবর্তন চেয়েছে? তারা অনেক কিছু প্রত্যাশা করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই বাংলাদেশটি স্বাধীন হয়েছিল লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে। স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্রকে ব্যাহত করেছেন অনেকেই।’ সংস্কারের বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্কারের বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে। আজকে অনেক ব্যক্তি সংস্কার নিয়ে অনেক কিছু বলছেন। কিন্তু বাংলাদেশে যে সংস্কার প্রয়োজন, কথাটি সবচেয়ে আগে সেদিন আমরা বলেছিলাম। আমরা সংস্কার নিয়ে কথা বলছি, কিন্তু দিন শেষে আমাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় ভরসা জনগণের ইস্যুগুলোকে নিয়ে আমাদের কি চিন্তা-ভাবনা করা উচিত না? অবশ্যই উচিত। কারণ এটিই হচ্ছে আমাদের রাজনীতি।’ জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন।

নির্বোধরা আমার কথা বুঝবে না: মির্জা আব্বাস
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘সত্য প্রকাশ করাই সাংবাদিকদের কাজ। তাই ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে উচ্চ কন্ঠে কথা বলাই প্রকৃত সাংবাদিকতা। দেশের মধ্যে থেকে কারা ষড়যন্ত্র করে এবং দেশের বাইরে থেকেও কারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, দেশকে কারা পেছনে নিয়ে যেতে চায়, সেই কুশীলবদের নাম গণমাধ্যমে তুলে ধরুন, জাতিকে জানান।’ রোববার (২৩ মার্চ) বিকালে রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের মিলনায়তনে প্রয়াত ফটো সাংবাদিকদের স্মরণে আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস আরো বলেন, ‘দেশে কিংবা বিদেশে যারা নির্বোধ আছে, তারা আমার কথা বুঝবে না। আমি বলেছি, এই সরকার যে সংস্কার লিখে দিবে আমরা সেগুলো কারেকশান করবো, রাজনৈতিক দলগুলো মিলে ঐক্যমতে আসবো। তারপরেই আমরা সেটাকে মানবো। এটাকে বিকৃত করে ওরা লিখেছে আমি নাকি কিছুই মানবো না।’ ‘আমি রাজনীতি করি বলে সত্য কথা স্বাধীনভাবে বলতে পারবো না এটা হতে পারে না। আপনারা যারা আজ স্বাধীনভাবে কথা বলেন তা আমরা অর্জন করে দিয়েছি। জেলে থেকে পঁচে পঁচে নিজের পরিবারকে ধ্বংশ করে দিয়ে সেই অধিকারটা অর্জন করে দিয়েছি। দীর্ঘ সময় আমরা লড়াই সংগ্রাম করেছি, কারাগারে কাটিয়েছি একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি। আজ এই সময়ে এসে যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যেতে নানা বাহানা করছে তাদের উদ্যেশ্য ভালো নয় দেশবাসীকে তাদের প্রতি সজাগ থাকতে হবে।’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মজলিশের সুরা সদস্য মো. দেলোয়ার হোসাইন ও আমরা বিএনপি পরিবারের আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবিএম রফিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশনের সভাপতি ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি একেএম মহসিন ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার। দোয়া পরিচালনা করেন ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বর্তমান অগ্রাদ্বিগুণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন মোস্তাক।

এবার সারজিসের পোস্টে হান্নানের প্রতিক্রিয়া, ‘সরি, আর চুপ থাকতে পারলাম না’
‘সরি, আর চুপ থাকতে পারলাম না’- আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) দুই শীর্ষ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন দলটির আরেক শীর্ষ নেতা আবদুল হান্নান মাসুদ। এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দিবাগত রাত ১টা ৪৪ মিনিটে ফের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘১১ মার্চ দুপুর ২টা ৩০ মিনিট। কিছু দিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।’ হাসনাতের বক্তব্য নিয়ে আজ রোববার (২৩ মার্চ) ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি কিছুটা ভুলভাবে এসেছে বলে জানান সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন সারজিস আলম। সেখানে মন্তব্য করেন হান্নান মাসুদ। কমেন্টে তিনি লিখেন, ‘এসব কি ভাই!! পাবলিকলিই বলছি- দুইজনের একজন মিথ্যে বলছেন। এটা চলতে পারে না। আর দলের গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট হোল্ড করেও আপনারা যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে বিচরণ করছেন এবং তা পাবলিক করে এনসিপিকেই বিতর্কিত করছেন।’ হান্নান মাসুদ আরও লেখেন, ‘মানুষ এনসিপিকে নিয়ে যখন স্বপ্ন বুনছে, তখন এভাবে এনসিপিকে বিতর্কিত করার কাদের এজেন্ডা!!!’ ‘সরি, আর চুপ থাকতে পারলাম না।’- এমন কমেন্টস করেন এনসিপির আরেক শীর্ষ নেতা। এদিকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল, কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দ্রুত বিচারের দাবিতে শনিবার (২২ মার্চ) ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। সেদিন রাত ৮টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এনসিপি। সেখানে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, নির্বাচন বা একটি রাজনৈতিক দল কার্যক্রম করতে পারবে কি পারবে না, এটি সম্পূর্ণই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবল সরকার, বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণের রয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী কিংবা রাষ্ট্রের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের আসলে এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য, পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত উপস্থাপনা দেওয়ার কোনো ধরনের এখতিয়ার নেই।’’ এর আগে গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে জানান, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা তার সরকারের নেই। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যে আলোচনাটি হয়েছে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক। সেটি হচ্ছে আমরা মনে করছি, রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতি রাজনীতিবিদেরাই নির্ধারণ করবেন—রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহ বা চলমান যা কিছুই, পরবর্তী রাজনীতি কোন দিকে যাবে, সেটি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। তো সে জায়গায় আমরা সন্দিহান বলেই গতকাল আমার স্ট্যাটাস দিতে হয়েছে।’ বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্যে বিএনপির অবস্থানের এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ ফিরলে, তাতে তাদের আপত্তি থাকবে না। তবে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বিষয়টি নিয়ে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না।’ তিনি লিখেন, ‘আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ৩৬ জুলাই ক্লোজড হয়ে গিয়েছে। নতুন করে ওপেন করার কোনই অবকাশ নেই।’ বিচারের প্রসঙ্গ এনে জামায়াতে আমির লিখেছেন, এ সময় জনগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই গণহত্যার বিচারটাই দেখতে চায়। এর বাহিরে অন্য কিছু ভাবার কোনও সুযোগ নেই। জামায়াতের আমিরের বক্তব্য এনসিপির হাসনাত আব্দুল্লাহর অবস্থানকে সমর্থন করে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অন্য দলগুলোর মধ্যেও ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।

জিএম কাদের ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও তার স্ত্রী শরীফা কাদেরের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরে সেট্রাল ইন্টেলিজেন্স থেকে পাঠানো চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠি দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান বরাবর দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) থেকে চাঁদাবাজি, মনোনয়ন বাণিজ্য ও দলীয় ফান্ডের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমশন কমিশন (দুদক)। গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন এবং সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯-২০১৪ সালে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে ১১৩টিতে পুরোপুরি একমত এনসিপি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৩টিতে পুরোপুরি একমত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে দলীয় মতামত জমা দেয় এনসিপি। পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহবায়ক সরোয়ার তুষার সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তুষার বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া স্প্রেডসিটে থাকা ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৩টি প্রস্তাবে পুরোপুরি একমত হয়েছি। ২৯টি প্রস্তাবে আমরা আংশিক একমত। ২২টি প্রস্তাবে আমরা একমত হতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ দুইটা কমিশন আমাদের কাছে স্প্রেডসিট পাঠায়নি। একটা হচ্ছে পুলিশ সংস্কার কমিশন, আরেকটা স্থানীয় সংস্কার কমিশন। এই রিপোর্টগুলো আমরা দেখতে পাইনি। এই ব্যাপারে কমিশনের অবস্থান জানতে চেয়েছি।

আ. লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় সংলাপ ডাকার আহ্বান : রাশেদ
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় সংলাপ ডাকার আহ্বান করছি। প্রধান উপদেষ্টা যদি আগামীকালই এই সংলাপ ডাকে আগামীকালই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে। রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে এক পোস্টে এ আহ্বান জানান তিনি। পোস্টে তিনি লেখেনয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় সংলাপ ডাকার আহ্বান করছি। প্রধান উপদেষ্টা যদি আগামীকালই এই সংলাপ ডাকে আগামীকালই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে। এখন কথা হলো, সেই সংলাপ কি ডাকা হবে? অন্তর্বর্তী সরকারে দুজন ছাত্র উপদেষ্টা আছেন, তারা সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে সংলাপ ডাকতে চাপ প্রয়োগ করুক। যদি তাদের কথা না শোনে, তাহলে পদত্যাগ করে জনতার কাতারে আসুক। তারপর জনগণ সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি লেখেন, প্রয়োজনে এই সরকার বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য থাকবে। সত্যিই যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চান, তবে জাতীয় সংলাপ ডাকতেই হবে এবং এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখতে হবে ছাত্র উপদেষ্টাদের। আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি, কোনও দল পাবলিক সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে গিয়ে বলতে পারবে না। ‘জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমেই নিষিদ্ধ হোক গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগ। নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ও সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়। সেটির আয়োজক হতে হবে সরকারকে। আর যদি সেটি না হয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন হলে অন্তর্বর্তী সরকার আজীবন দায়ী থেকে যাবে।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই: সারজিস আলম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। একটি পক্ষ সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব লাগানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তারা প্রোপাগান্ডা ছাড়াচ্ছে। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রংপুর ডিভিশন রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। সারজিস আলম বলেন, সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেই। অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মুখোমুখি অবস্থানে তারা দাঁড়াবেন না। মব জাস্টিস ও ন্যায়বিচার সাংঘর্ষিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে হবে। কারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশের স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঠিক হয়ে গেলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে পারব। সংস্কারগুলো কোন পর্যায়ের হবে তাও ঠিক হয়ে যাবে। রিজভী বলেন, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফলতা আসবে। গণমাধ্যমে যাতে মালিকপক্ষ হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেই বিষয়ে আইন হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মতভিন্নতা থাকলেও যে কোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে: তারেক রহমান
মতভিন্নতা থাকলেও যে কোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার (২২ মার্চ) ১২ দলীয় জোটের ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান। তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদেরকে যে কোনো মূল্যে ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। মত-ভিন্নতা থাকবে, আমরা বসব, আলোচনা করব। এমন কিছু বলব না এবং এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকব যাতে করে কোনোভাবেই স্বৈরাচার বা তার প্রেত্মাতারা আবার এ দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসতে পারে।’ আন্দোলনে সহকর্মী ও আপনজনদের হারানোর কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আসুন, যে ঐক্যকে নিয়ে আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করেছিলাম, সেই ঐক্যকে আমরা ধরে রাখি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আগামী দিনে এই ঐক্যকে বজায় রেখে, এ দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ দেশের মানুষের প্রত্যাশিত সংস্কার প্রক্রিয়া আমরা সকলেই মিলে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব।’ আড়াই বছর আগে পরিবর্তনের লক্ষ্যে ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের প্রস্তাব উত্থাপনের বিষয় উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা দেখছি, একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে যেখানে সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র বলতে সাধারণ মানুষের কাছে কি বুঝা যায়? সাধারণ মানুষের কাছে এটি নির্বাচন, নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার সিস্টেম যা আমরা গণতন্ত্র বলি।’ তারেক রহমান বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন যে সংস্কার শেষ হবে তারপর নির্বাচন হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, যেটা শেষ হয়ে যায় সেটা তো সংস্কার হতে পারে না। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে গাফেলতিগুলো আছে, তা সংস্কার করব এবং সময়ের সঙ্গে আরও ভালো ব্যবস্থা করব। দেশের মানুষের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা এখানে আছি, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ, আমাদের রাজনৈতিক ভিন্নমত আছে, আদর্শ সবার এক নয়, কিন্তু একটি জায়গায় আমরা সবাই এক- তথা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ ও গণতন্ত্র। এখানে কোনো বিভেদ নেই।’ ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং মুখপাত্র জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আখতার হোসেন, গণ অধিকার পরিষদের ফারুক হাসান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কাজী নাহিদ।

শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আ.লীগকে রাজনীতি করতে দেব না: আখতার
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যত বার ক্ষমতায় এসেছে, তত বারই এ দেশের মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ‘৭১-এর পর তারা গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিলো। এ দেশের মানুষেরা যে গণতন্ত্র চেয়েছিলো ‘১৪, ‘১৮ ও ‘২৪-এর নির্বাচনে সে গণতন্ত্রের মুখে চুনকালি মেখেছে। আমাদের চোখে সামনে যারা মারা গেছে তাদের রক্তের শপথ, আমাদের শরীরে এক ফোটা রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে দেব না।’ শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ আখতার হোসেন আরো বলেন, ‘কোনো সাধারণ ঘটনা বা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিদায় হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের বিদায় হয়েছে। সুতরাং আমাদের পুনর্জন্ম হতে পারে, কিন্তু আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে না। যেই নৌকা ভেঙে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে; সেই নৌকাকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে ভালো আওয়ামী লীগের কথা বলেন। আমরা বলি, লোম বাছতে গিয়ে যেমন কম্বল উজাড় হয়ে যায়, তেমনই আওয়ামী লীগের ভালো নেতৃত্ব বাছাই করতে গেলে আওয়ামী লীগ উজাড় হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের কোনো ভালো নেতৃত্ব নাই।’ আখতার হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শাপলা, পিলখানা, ‘২৪-এর গণহত্যাসহ অন্যান্য গণহত্যা চালিয়েছে তার দায় স্বীকার করেনি। সুতরাং তাদের পক্ষে কেউ দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’ তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের ৭ মাস হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক কাজ শুরু করেনি। আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে লীগের বিচার শুরু করতে হবে। শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী না, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক কাজ করতে দেওয়া যাবে না। লীগের নিবন্ধন অল্প সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে। না হলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে এসে লড়াই করবে।’ সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে আখতার হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যে চার্টার দিয়েছে, আপনারা সে চার্টারে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা উল্লেখ করুন। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণে বিষয়ে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করুন।’ নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে বা যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে তাদের এর মূল্য দিতে হয়েছে। যদি ১০টা ফেরাউন আর ১০টা নমরুদ একত্র করা হয় তা-ও হাসিনার সমান হবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই; যারা গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত হয়েছে তাদেরকে পুনরায় নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হলে আমার-আপনার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।’ হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলো; তাকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীদের ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এরপর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে, পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয় আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।’ হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচারের মধ্য দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক দল না, তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের অংশ। ৫ আগস্টের পর ভারতের হাতে থাকা আওয়ামী লীগের সুতা আমরা কেটে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি বিচার করতে পারেন আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ফিরতে পারবে না। এনসিপি যতদিন আছে, আওয়ামী লীগকে এদেশে পুনর্বাসন করার সুযোগ দেওয়া হবে না।’ কিছু প্রশ্ন তুলে হাসনাত বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগকে রেখে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেন; তাদের আমরা প্রশ্ন করতে চাই, বিগত তিনটি নির্বাচনে ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিলো? যেই দেশে ২ হাজার মানুষের রক্তের দাগ শুকায় নাই, শাপলা, পিলখানা, ভারতীয় আগ্রাসনের বিচার, আবরার হত্যাকাণ্ড, জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার হয় নাই; সেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নাই।’ সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা ক্যান্টমেন্টেই থাকুন। আমরা আপনাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপনাদের অবদানকে আমরা স্বীকার করি। কিন্তু স্বাধীনতার পরে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ক্যান্টনমেন্ট থেকে যেভাবে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে সে সুযোগ থাকবে না। এ দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে শুধু রাজনীতিবিদরা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ইন্সটিটিউটের বিপক্ষে না। আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে সেগুলোকে আমরা ঠিক করতে চাই। সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আপনাদের ওপর এখনো আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আপনারা আমাদের আস্থার প্রতিদান দিবেন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি; তাহলে আওয়ামী লীগ আর ফিরতে পারবে না। কিন্তু আপনারা যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপোস করেন তাহলে আমাদের মতো মজলুমদের সাথে বেঈমানী করা হবে।’ সমাবেশে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহিন সরকার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম আইনি বক্তব্য দেন।