ভিয়েতনামে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
- প্রকাশঃ ০৬:২৫ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভিয়েতনামের হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ পালন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণের মাধ্যমে দিবসটির প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ দূতাবাসের অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পড়া হয়; প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় ও একুশের ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সন্ধ্যায় দূতাবাসের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে হ্যানয়স্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকবৃন্দ, ইউনেস্কো অফিসের শিক্ষাবিষয়ক প্রতিনিধি, ভিয়েতনামের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি এবং ভিয়েতনামে অবস্থিত প্রবাসি বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ও হ্যানয়স্থ ইউনেস্কো অফিসের শিক্ষাবিষয়ক প্রতিনিধি মিকি নযাবা।
মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের শহীদদেরকেশ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫তম উদযাপন বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের জন্য এক দিকে কষ্টের, অন্যদিকে সম্মান ও গৌরবের। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে আমাদের এক ঝাঁক তরুণ রাজপথে তাদের জীবন উৎসর্গ করে। আমরা রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষার অধিকার ফিরে পেয়েছি যা বিশ্বে বিরল। অন্যদিকে দিবসটি গৌরবের। আমাদের রক্তে অর্জিত ভাষার অধিকারের সম্মানে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০০০ সাল থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রকর্তৃক একযোগে পালিত হয়ে আসছে।’
‘বাংলাদেশের তরুণ ছেলেরা মাতৃভাষা রক্ষার্থে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে যে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, আগামী শতাব্দীগুলোতে, কাল থেকে কালান্তরে সেই চেতনায় ভাষা এবং সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার মাধ্যমে সারাবিশ্বে আরো শান্তি ও উন্নয়নের পথ সুপ্রসারিত হোক।’
মিকি নযাবা দিবসটির ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য ‘মেক ল্যাঙ্গুয়েজ কাউন্ট ফর সাসটেইনঅ্যাবল ডেভেলপমেন্ট’ উল্লেখ করে বলেন, ‘জাতিসংঘ উন্নয়ন অভিষ্ট লক্ষ্য-৪ (অন্তর্ভূক্তিমূলক, গুনগত ও জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের বিকল্প নেই। মাতৃভাষা ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাক্ষেত্রে পরিপূর্ণ বিকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ। অথচ আজ বিশ্বে অনেক শিশু মাতৃভাষায় শিক্ষার গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত।’
বিশ্বের সব শিশুর জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মানে হ্যানয়স্থ বেশ কয়েকটি দূতাবাস থেকে তাদের মাতৃভাষায় প্রাপ্ত ভিডিও পারফর্মেন্স দেখানো হয়। ভিয়েতনামে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইটো নাওকি বাংলা ভাষায় গান করেন। রাশিয়া দুতাবাসের কূটনীতিক আন্দ্রে বোরোডেনকো ও ভিয়েতনামে বসবাসরত প্রবাসি বাংলাদেশী নাগরিক জুনায়েদ সিদ্দিকি রাশিয়ান ও বাংলা ভাষায় কবিতা আবৃত্তি করে শোনান।
এছাড়াও, মায়ের ভাষায় অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য আয়োজন করা হয় ‘দেয়াল লিখন উৎসব’। এতে বিভিন্ন ভাষাভাষীদের লেখনীতে বিভিন্ন ভাষার মিলনমেলায় পরিণত হয় দূতাবাসের প্রাঙ্গণ।