
পরবর্তী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের প্রতিটি গাড়ির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এসব গাড়ি কিনতে মোট ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
একই সঙ্গে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য ২২০টি গাড়ি কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯৫টি পাজেরো জিপ এবং ২৫টি মাইক্রোবাস রয়েছে। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২১ আগস্ট অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠায়, যেখানে পরবর্তী সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদেষ্টাদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার কথা বলা হয়।
এই গাড়িগুলো সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে কেনা হবে, যা বাস্তবায়ন করবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।
প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা বর্তমান গাড়িগুলোর অবস্থা ভালো নয়, এবং বারবার মেরামতের প্রয়োজন হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। ফলে মন্ত্রীদের নির্বাচনী সফর ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনের মতো কার্যক্রমে অসুবিধা হতে পারে।
সম্প্রতি অর্থ বিভাগ এই প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। এখন আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদনের পর এসব গাড়ি কেনা হবে।
আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ইউএনওদের জন্য প্রতিস্থাপন হিসেবে ১৯৫টি পাজেরো এবং জেলা প্রশাসকদের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস কেনার বিষয়েও অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি জিপের দাম এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং প্রতিটি মাইক্রোবাসের মূল্য ৫২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই ২২০টি গাড়ি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
যানবাহন অধিদপ্তরের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোটরযান ক্রয় খাতে ৩২৮ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু মোট ২৮০টি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাড়তি অর্থ হিসেবে অন্য খাত থেকে ৯৬ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়েরও অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
তবে অর্থ বিভাগ কিছু শর্ত দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে - নতুন জিপগুলোকে প্রাধিকারভুক্ত ঘোষণা করা, এবং প্রতিস্থাপনযোগ্য যানবাহনের ক্ষেত্রে বিআরটিএর পরিদর্শন দল কর্তৃক অকেজো ঘোষণা সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠানো।
এছাড়া, ক্রয় প্রক্রিয়ায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ ও বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তবে চলতি অর্থবছরের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকার যে পরিপত্র জারি করেছিল, সেখানে বলা হয় সব ধরনের নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে, ব্যতিক্রম কেবল ১০ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে।
সরকারি পরিবহন পুলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান মন্ত্রীদের ব্যবহৃত গাড়িগুলো ৯ বছরের পুরনো। ফলে পরিপত্রের নির্দেশনা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিদেশে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত হয়, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, মন্ত্রীদের গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এ জন্য নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পরবর্তী সরকার বা মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবেন, কী গাড়ি কিনবেন; তার সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার কেন নিচ্ছে? এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সরকারের ‘ম্যান্ডেট’ এটা নয়। এ দায় তারা কেন নিচ্ছেন, বুঝে আসছে না। অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।”