
নারী কর্মীদের পোশাকসংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ নির্দেশনার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে এবার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। ব্যাঙ্কটির এক বিভাগ থেকে সম্প্রতি এমন একটি পরামর্শ দেওয়া হয়, যেখানে নারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়নার মতো 'শালীন' পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে নিষেধ করা হয় ছোট হাতার জামা, ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক ও লেগিংস পরতে।

গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। বিষয়টি বুধবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকে একে নারীর পোশাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ফেসবুকে ইংরেজিতে দেওয়া একটি বিস্তারিত স্ট্যাটাসে তিনি তার মতামত জানিয়েছেন এবং প্রতিবাদস্বরূপ একটি হাতাকাটা পোশাক পরা ছবি পোস্ট করেছেন।

‘আমি, আমার পোশাক এবং সামাজিক বিচারের ভার’ শিরোনামে দেওয়া পোস্টে বাঁধন লিখেছেন,
“আমি একসময় একটা ছোট্ট মেয়ে ছিলাম উজ্জ্বল, দয়ালু এবং সবসময় সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী পোশাক পরতাম... আমি নিখুঁত মেয়ে হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম সমাজ আমার কাছ থেকে যা দাবি করে তার সেরা সংস্করণ।”
তিনি লেখেন, কীভাবে একটি নিপীড়নমূলক দাম্পত্য জীবন থেকে বেরিয়ে এসে ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছিলেন। তখনও তিনি সমাজের চোখে ‘ভালো মেয়ে’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করতেন, কিন্তু ধীরে ধীরে পোশাক ও আত্মপরিচয়ের মধ্য দিয়ে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তুলেছিলেন।
“আমি তখনও লাজুক, তখনও সত্যবাদী ছিলাম কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে শুরু করি এবং আবার আমার জীবনকে ভালোবাসতে শুরু করি... আমি এমন পোশাক পরেছিলাম যা আমার ত্বককে ফুটিয়ে তোলে। এমন পোশাক যা ‘ভালো মেয়েদের’ পরা উচিত নয়,” বলেন বাঁধন।
তার স্ট্যাটাসে উঠে আসে দ্বিতীয় বিবাহবিচ্ছেদের পর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির চাপ এবং আত্মমর্যাদার সংগ্রামের কথাও। তিনি বলেন,
“দ্বিতীয় বিবাহবিচ্ছেদের পর আমি কেবল ব্যর্থ বোধ করিনি, আমার মনে হয়েছিল যে সমাজ আমাকে সবচেয়ে খারাপ নারী বলে চিহ্নিত করেছে... আমি আমার অধিকার দাবি করতে শুরু করি। আমি আমার স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করি।”
বাঁধন আরও জানান, কীভাবে বছর ধরে সমাজ তাকে কী পরতে হবে তা বলে আসছে একবার এক বন্ধু ফোন করে বলেছিল,
“তুমি খুব বুদ্ধিমানের সাথে কথা বলো। তুমি খুব ভালো করো, কিন্তু তোমার আরও শালীন পোশাক পরা উচিত।”
একটি টিভি সাক্ষাৎকারে স্লিভলেস ব্লাউজ পরার পর চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তার কাঁধ চুল দিয়ে ঢাকতে বলেছিল, এমন অভিজ্ঞতার কথাও জানান তিনি।

স্ট্যাটাসের শেষ অংশে বাঁধন বলেন,
“কিন্তু তুমি জানো কি? আমি আর পরোয়া করি না। আমি স্বাধীন। আমাকে কী পরবো, কী বলবো, কী ভাববো, বা কীভাবে বাঁচবো তা বলার অধিকার কারো নেই... স্বর্গের পথ তোমার নিজের কর্মকাণ্ডের দ্বারাই প্রশস্ত হয়, অন্যদের উপর নজরদারি করে নয়, বিশেষ করে নারীদের নিয়ন্ত্রণ করে নয়।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, উদ্ভূত বিতর্কের পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই নির্দেশনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আজ (২৪ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় সাংবাদিকদের বলেন,
“এ বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এবং এটি অফিসিয়াল সার্কুলার আকারেও জারি হয়নি।”
তিনি আরও জানান, পেশাগত পরিবেশে শালীনতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ মতামত থাকলেও তা এখনো নীতিগতভাবে গৃহীত হয়নি।