
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই আদেশ দেন। তিন সদস্যের এই বিচারিক প্যানেলের নেতৃত্বে ছিলেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৪ জন পলাতক এবং ৬ জন গ্রেফতার রয়েছেন। গ্রেফতার আসামিরা হলেন—এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল এবং আনোয়ার পারভেজ। অভিযোগ গঠনের দিন তারা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৩০ জুলাই মামলাটিতে অভিযোগ গঠনের জন্য ৬ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছিলেন একই ট্রাইব্যুনাল। সে অনুযায়ী, বুধবার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
সেদিন ট্রাইব্যুনালে পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োগ পাওয়া চারজন আইনজীবী। তাদের মধ্যে পাঁচ আসামির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সুজাত মিয়া। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠনের নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুনুর রশীদ। শুনানিতে অংশ নেন আরও দুই আইনজীবী—ইশরাত জাহান এবং শহিদুল ইসলাম।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে নেতৃত্ব দেন গাজী এমএইচ তামিম। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, মঈনুল করিম এবং আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
৩০ জুলাইয়ের আগেই, ২৮ জুলাই প্রসিকিউশন অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে। সেদিন দুই ঘণ্টাব্যাপী শুনানিতে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি মামলার নির্দিষ্ট অভিযোগসহ বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তারও আগে, ২২ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-২, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনারসহ পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে চারজন স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন। ওই দিন শুনানির জন্য ২৮ জুলাই নির্ধারিত করা হয়।
২৮ জুলাই শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম ও মঈনুল করিম।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জানান, "এ মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে এখনও ২৪ জন পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তারা আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম চলবে।" তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার ছয় আসামির মধ্যে দুজন এখনো আইনজীবী নিয়োগ দেননি, যাদের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল জানতে চেয়েছে।
এদিকে, পলাতক ২৪ জনের পক্ষে প্রতিজন আইনজীবী ছয়জন করে আসামির দায়িত্বে রয়েছেন।
১৩ জুলাই, মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য একটি ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রাসেল ও পারভেজকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে পলাতকদের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের আদালতে হাজির করার নির্দেশও দেওয়া হয়।
এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ৩০ জুন গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। তার আগে, ২৪ জুন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওই প্রতিবেদনে মোট ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।