
ফরিদপুরের সদরপুরে মাত্র ১০ টাকায় ইলিশ বিতরণের ঘোষণা দিয়েই বিপদে পড়েন এক সংসদ প্রার্থী। পরিস্থিতি এতটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত তিনি প্রাণ রক্ষার্থে পলায়ন করেন। ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন রায়হান জামিল, যিনি ফরিদপুর-৪ আসনের (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১:৩০ মিনিটের দিকে সদরপুর উপজেলার বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, রায়হান জামিল নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে মাত্র ১০ টাকায় একটি করে ইলিশ বিতরণের ঘোষণা দেন। খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল থেকেই স্কুল মাঠে মানুষ ভিড় করতে শুরু করেন। তবে তার সঙ্গে আনা হয়েছিল মাত্র ৬০০টি ইলিশ, যেখানে মাছ নিতে আসেন অন্তত ২ হাজার মানুষ।
ধারাবাহিক ভিড় ও ধাক্কাধাক্কির কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অনেক মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও মাছ পাননি। এ পরিস্থিতিতে রায়হান জামিল নিরাপদে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। পরে তিনি ভাষণচর ইউনিয়নে গেলে ক্ষুব্ধ জনতা তার গাড়ি আটকায়, কিন্তু স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি সেখান থেকেও বের হতে সক্ষম হন।
স্থানীয় দিনমজুর মোসলেম শেখ বলেন, “সকালে কিছু না খেয়ে মাছের আশায় লাইনে দাঁড়াইছিলাম। কিন্তু কিছুই পেলাম না। উল্টো ধাক্কাধাক্কিতে মাথায় চোটও পেয়েছি।”
একই অভিযোগ করেছেন গৃহিণী সুমি আক্তার, “ভেবেছিলাম ১০ টাকায় ইলিশ পেলে একদিন হলেও বাচ্চাদের মুখে দিতে পারব। কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হলো।”
কলেজছাত্র রাসেল মোল্লা বলেন, “মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা না রাখা ঠিক নয়। গ্রামের শত শত মানুষ ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু মাছ পেয়েছে মাত্র কয়েকজন। এতে তো ক্ষোভ হবে।”
রায়হান জামিলও ঘটনার পর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেন, “ইলিশ এখন অনেক দামি, সাধারণ মানুষ খেতে পারে না। তাই ১০ টাকায় মাছ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এত ভিড় হবে ভাবিনি। সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ফিরে আসতে হয়েছে।”
এ ঘটনায় সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকদেব রায় জানান, “আমি আগে থেকেই তাকে সতর্ক করেছিলাম, কিন্তু তিনি শুনেননি। পরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”