
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘জুলাই সনদ’কে ভিত্তি করে আয়োজনের দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটি বলছে, এই সনদকে আইনি রূপ দিতে হবে এবং এর আলোকে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। পাশাপাশি তারা প্রস্তাব করেছে, ভোটগ্রহণ যেন সংখ্যানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে হয় এবং জাতীয় নির্বাচন যেন স্থানীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান।
গাজী আতাউর রহমান অভিযোগ করেন, "জাতীয় ঐকমত্য এবং জুলাই সনদ প্রণয়নের আগেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই অভ্যুত্থান ও এর চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।"
তিনি আরও বলেন, "সিইসিকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান না আসা পর্যন্ত যেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করা হয়।"
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির দাবি তুলে গাজী আতাউর বলেন, বর্তমান প্রথম-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (FPTP) পদ্ধতির পরিবর্তে PR পদ্ধতিতে ভোট আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, "আমরা বিদ্যমান পদ্ধতি বাতিল করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। সেটা জাতীয় সংসদের বর্তমান নিম্নকক্ষের নির্বাচনের ক্ষেত্রেই হতে হবে। উচ্চকক্ষের বিষয়টি পরে দেখা যাবে।"
এ দাবিকে ‘গণদাবি’ উল্লেখ করে তিনি জানান, জনগণের মধ্যেও তারা বিষয়টি তুলে ধরবেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে গাজী আতাউর বলেন, "সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অনুপস্থিত। আমাদের নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "পিআর পদ্ধতি না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া কঠিন। আমরা একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাই। এ জন্য যা করণীয়, সেটা আমরা সিইসিকে করতে বলেছি।"
বৈঠকে অংশ নেওয়া চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে দলটি সাতটি মূল প্রস্তাব পেশ করে।
এই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল– দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং এসব নির্দেশ লঙ্ঘিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান।
তারা আরও দাবি করে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েন করতে হবে এবং জাতীয় ও স্থানীয় সব নির্বাচন জুলাই সনদ অনুসারে ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের ভিত্তিতে আয়োজন করতে হবে।
অতিরিক্তভাবে, দলটির প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল ও নির্বাচনে তাদের অযোগ্য ঘোষণা করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজ ও খুনিদেরও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার দাবি জানায় দলটি।