
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ জনগণকে দমন করার ক্ষমতাকেই সাংবিধানিক শক্তি মনে করত। তারা জনগণের ইচ্ছাকে কখনো মূল্য দিত না, বরং নির্যাতন চালানোর ক্ষমতাকেই নিজেদের অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘রেভিউলুশনারী কনস্টিটুয়নালিজম: এন্ড হোয়াই ইট ওয়াজ এসেনশিয়াল টু ডিক্লেয়ার দ্য ফিফটিন্থ এমেন্ডমেন্ট আনকনস্টিটিউশনাল’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, “জেনো জনগণের ইচ্ছার কোনো গুরুত্ব তাদের কাছে ছিল না; তারা শুধু নির্যাতন চালানোর ক্ষমতাকে সাংবিধানিক শক্তি হিসেবে দেখত।”
তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিশ্লেষণ করে বলেন, তাদের রাজনীতি মূলত জিয়াউর রহমানকে হেয় করা এবং বঙ্গবন্ধুকে সর্বোচ্চ আসনে বসানো কেন্দ্রিক ছিল। বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের সরকারি চাকরিতে যোগদানের কোনো বিধান ছিল না; এটি প্রবর্তন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলও তার প্রবর্তিত প্রতিষ্ঠান। যদিও শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে জিয়াউর রহমানকে সমালোচনা করতেন, তবু অনেক ক্ষেত্রে তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবর্তে জিয়াউর রহমানের পথ অনুসরণ করেছিলেন।
পঞ্চদশ সংশোধনীকে তিনি ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে বলেন, “মাঝে মাঝে আমার মনে হতো এমন এক সাংবিধানিক সংশোধনী আওয়ামী লীগের লোকজন কি এতটাই বোকা হয়ে করেছে, নাকি উদ্ধত হয়ে? আমার মনে হয় তারা উদ্ধতই ছিল। তারা ভেবেছিল, তাদের ক্ষমতা এতই অটল যে, একটি নির্যাতন যন্ত্র চালু করলেই জনগণ মুখ খুলতে পারবে না।”
ড. আসিফ প্রশ্ন তোলেন, প্রধানমন্ত্রীর এত ক্ষমতা কেন? মৌলিক অধিকারগুলোর ওপর এত সীমাবদ্ধতা কেন? মৌলিক নীতিগুলো কি সারা জীবন মৌলিক নীতি হিসেবেই থাকবে?
তিনি সংবিধান চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “আমাদের দেশের সংবিধানের ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরি। এত সমৃদ্ধ কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও অনেকে এগুলো উপেক্ষা করে। আলোচনার মাধ্যমে কনস্টিটুয়শনালিজমকে জনপ্রিয় করলে মানুষ ধীরে ধীরে এতে আগ্রহী হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও ব্লাস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
প্যানেল আলোচনায় ড. আসিফ নজরুল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক,নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ একরামুল হক,আইনবিদ, লেখক ও অনুবাদক মিল্লাত হোসেন
অনুষ্ঠানে প্রথিতযশা আইনবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।