
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দারের মধ্যে রোববার বেলা পৌনে ১১টায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
শনিবার দুই দিনের সফরে ঢাকা আসেন ইসহাক দার। বৈঠককে ঘিরে দুই দেশ চূড়ান্ত করেছে কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি, সাংস্কৃতিক বিনিময়, দুদেশের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মধ্যে সমঝোতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে যৌথ কমিটি গঠন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা এবং সংবাদ সংস্থা সমঝোতা। এছাড়া পণ্য ও সেবা মান নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও আন্তঃসংযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বর্তমানে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীও ঢাকায় অবস্থান করছেন। বৈঠককে কয়েকটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে—প্রথমে রাজনৈতিক সহযোগিতা, অর্থনীতি ও অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় বিষয়, এরপর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ বৈঠকে পাকিস্তানি বাহিনীর ১৯৭১ সালের গণহত্যা, ক্ষতিপূরণ, আটকে থাকা পাকিস্তানির প্রত্যাবাসন, সম্পদ হিস্যা ও ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধসহ বিভিন্ন জরুরি বিষয় তুলে ধরবে।
এক কূটনীতিক জানান, বৈঠকে প্রতিরক্ষা, জঙ্গিবাদ দমন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি এবং সার্ক সচলকরণ বিষয়গুলোও গুরুত্ব পাবে। দীর্ঘ সময় পরে এই বৈঠক হওয়ায় বাংলাদেশ এটিকে সফল করতে চায়।
সকাল ১০টায় তৌহিদ হোসেন ও ইসহাক দারের মধ্যে একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হয়। ইসহাক দার তার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন মো. তৌহিদ হোসেন।
বৈঠকের পর ইসহাক দারের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তিনি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নেবেন। এছাড়া তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। রাতেই তিনি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসহাক দারকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। এর আগে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি ঢাকায় এসেছিলেন, পাশাপাশি গত জুলাইয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভী এবং গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সফর ঘটে। ঢাকায় ইসহাক দার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মো. তৌহিদ হোসেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।