
গাজা দখলের লক্ষ্যে ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানে মঙ্গলবার একদিনেই অন্তত ১০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও সাংবাদিকও রয়েছেন। এর মধ্যে গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ জনের বেশি, যাদের অনেকেই মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।
বুধবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং শহরের আল-সাবরা মহল্লায় সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে। এলাকাটি কয়েকদিন ধরে টানা হামলার মুখে রয়েছে।
আল-সাবরায় নিহত অন্তত ৩২ জন মানুষ সহায়তা সংগ্রহে বেরিয়েছিলেন বলে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজা সিটি দখলের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হিন্দ খুদারি বলেন, “গাজার মানুষ যেন খাঁচায় বন্দি হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। তারা যেখানে যায়, বোমা হামলা তাদের অনুসরণ করছে।”
তিনি আরও জানান, খাদ্য ও মানবিক সহায়তার ওপর অবরোধ থাকায় মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৩৬১-এ দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় পানির লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ড্রোন হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সাতজন শিশু ছিল।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল সামাজিক মাধ্যমে নিহত শিশুদের রক্তাক্ত লাশ ও পানির পাত্রের ছবি প্রকাশ করে বলেন, “পানি সংগ্রহ করতে দাঁড়ানো মানুষদের লক্ষ্য করে সরাসরি হামলা চালানো হয়েছে, এটি নতুন এক হত্যাযজ্ঞ।”
গাজা সিটিতে আল-আফ পরিবারের বাড়িতে চালানো হামলায় ১০ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এই অপরাধ ইসরায়েলের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রমাণ।” একইসঙ্গে বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী করে এই হামলাগুলোকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এদিকে, সাংবাদিকদের ওপরও হামলা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার নিহত হন আল-মানারার সাংবাদিক রস্মি সালেম এবং ইমান আল-জামলি। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০ জনের বেশি।
সেইসঙ্গে ইসরায়েল সেনাবাহিনীতে মঙ্গলবার হাজার হাজার রিজার্ভ সদস্যকে ডাকা হয়েছে। সেনাপ্রধান এয়াল জামির বলেন, “আমরা অভিযানে আরও গভীরে নিয়ে যাব।” তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৩৬৫ সেনা রিজার্ভ ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
অন্যদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানিয়েছেন, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে, তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, গাজা দখলের পরিকল্পনা সবার জন্য, এমনকি ইসরায়েলি বন্দিদের জন্যও হুমকির সৃষ্টি করবে।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমরা হামাসকে পরাজিত করার জন্য লড়ছি।”