
রাজধানীর ভাটারা থানাধীন এলাকায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত ‘গোপন বৈঠক’কে কেন্দ্র করে পুলিশ বলছে, এই ঘটনাকে ঘিরে কারা জড়িত এবং প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল তা খতিয়ে দেখতে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই একাধিক গ্রেপ্তারও হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
গত ৮ জুলাই ভাটারার একটি কনভেনশন হলে নিষিদ্ধ সংগঠনের ২২ নেতা-কর্মী একটি ‘গোপন সভা’ করার সময় গ্রেপ্তার হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর সাদিকুল হকও উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঐ বৈঠকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রস্তুতি এবং দলীয় ক্যাডারদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তালেবুর রহমান বলেন, কনভেনশন সেন্টারটি ভাড়া নেওয়া হয় শামীমা নাসরিন শম্পা নামে একজন নারীর মাধ্যমে। তিনি বিদেশে লোক পাঠানোর একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে হলটি ভাড়া নেন। এর আড়ালে সেখানে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তদের জড়ো করা হয়, যার প্রেক্ষিতে গত ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ইতোমধ্যে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনার অন্য কোনো দিক আছে কি না, এর প্রকৃত রহস্য কী এবং কারা কারা এর পেছনে দায়ী? ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত, শিগগিরই উন্মোচন করার আশা করছি।
তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা আগে থেকেও দেখা গেছে, তাই নিরাপত্তা বাহিনী সজাগ রয়েছে।
আগস্ট মাস ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে এ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। “আমরা সব সময় সতর্ক রয়েছি। আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা রয়েছে।”
তিনি জানান, ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতির দিকে রয়েছে, যদিও কিছু চক্র এখনও অস্থিতিশীলতা তৈরির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় নিষিদ্ধ সংগঠনের আরও আটজনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“আমাদের কাছে যে গোয়েন্দা তথ্য আছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে কারও বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, কোনো রকম আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে আমরা গ্রেপ্তারগুলো করছি। এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় পরিষ্কার, কাউকে ঢালাওভাবে বা হয়রানিমূলক গ্রেপ্তারের কোনো অবকাশ নেই, বলেন তিনি।
ডিএমপির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, পুলিশ গণগ্রেপ্তার কিংবা হয়রানিমূলক কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির আওতাধীন ৫০টি থানায় ৪৮৯টি টহল টিম এবং ৬৬টি চেকপোস্ট কাজ করছে।
এ সময়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে ২০টি মোবাইল, ৬টি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেটকার ও বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে বলে জানান ডিএমপির এই মুখপাত্র।