
ইসরায়েলি নৌবাহিনী যখন ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ আটকাতে ব্যস্ত ছিল, ঠিক সেই সময় সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সমুদ্রে নেমে বিরল মাছের ঝাঁক ধরেছেন গাজার জেলেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, একসঙ্গে ডজনখানেক জেলে ভারি জাল টেনে মাছ তুলছেন, আর তীরে উপস্থিত স্থানীয়রা উল্লাসে ফেটে পড়ছেন। খবর দ্য সিয়াসাত ডেইলির।
বুধবার (১ অক্টোবর) ইসরায়েলি বাহিনী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ আটক করে, যেখানে ৪০টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪৫০ জন মানবাধিকারকর্মী অংশ নিয়েছিলেন। তারা অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। ইসরায়েলি নৌবাহিনী ওই অভিযান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এ সময় জেলেরা স্বাভাবিকের তুলনায় গভীর সমুদ্রে যেতে সক্ষম হন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গাজার একাধিক বাসিন্দা জানান, ফ্লোটিলার উপস্থিতির কারণে ইসরায়েলি টহল কিছু সময়ের জন্য মনোযোগ হারায়, যা জেলেদের জন্য ছিল বহু প্রতীক্ষিত সুযোগ। অনেকে মাসের পর মাস বন্দরের পাশে বসে থেকে সেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন—যাতে গুলিবর্ষণ, আটক বা নৌকা বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয় ছাড়াই মাছ ধরতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, “এটা অবরোধের মধ্যেও জীবনের জয়গান।” কেউ লিখেছেন, “এটাই গাজাবাসীর সহনশীলতার প্রতীক,” আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “কেন এখনো গাজার জেলেদের স্বাধীনভাবে মাছ ধরতে দেওয়া হয় না?”
২০০০ সাল থেকে গাজার উপকূলে ইসরায়েল কঠোর নৌ অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। বর্তমানে জেলেদের চলাচল সীমাবদ্ধ করা হয়েছে মাত্র ছয় নটিক্যাল মাইলের মধ্যে, যেখানে ওসলো চুক্তি অনুযায়ী তাদের ২০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি থাকার কথা।
গাজার কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতের কারণে মৎস্য খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ টন মাছ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে, যার বাজারমূল্য ২ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। প্রায় ৪ হাজার জেলে জীবিকা হারিয়েছেন, ফলে গাজার খাদ্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে—যেখানে একসময় মাছ ছিল মানুষের প্রধান প্রোটিনের উৎস।