
ঘুষের পরিমাণ আগের তুলনায় পাঁচ গুণ বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আগে যেখানে ১ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হতো, এখন সেটি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ টাকায়।
শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে একটি বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, গতকাল একজন বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেছেন ‘আগে ঘুষ দিতাম এক লাখ টাকা, এখন দিতে হচ্ছে ৫ লাখ টাকা।’ আমি জানি না…বিষয়টা কীভাবে দেখবেন আপনারা। কিন্তু এটাই সত্য।
অনুষ্ঠানে ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা : যাপিত জীবনের আলেখ্য’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
বক্তব্যে মির্জা ফখরুল পুলিশ প্রশাসনের অদক্ষতা ও অনাস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, পুলিশের মধ্যে এখনো কাঙ্ক্ষিত কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং তারা সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তার ভাষায়, কেউ পুলিশের কাছে সেবা নিতে গেলে তারা কখনো মন্ত্রণালয়ের, কখনো আদালতের দোহাই দেয়। এতে বোঝা যায়, পুলিশ নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে এবং তারা আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিগত সরকারের নানা অনিয়মে পুলিশ সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। তাই এই কাঠামো রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়।
গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চাপিয়ে দিয়ে কোনো পরিবর্তন আনা যায় না। গণতন্ত্রকে তার নিজস্ব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই অগ্রসর হতে দিতে হবে, বলেন তিনি। সেক্ষেত্রে কোনো বিলম্ব না করে দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে রাষ্ট্রে কাঠামোগত সংস্কার আনতে হবে, বলেন ফখরুল। এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব জনগণের কথা বলা এবং একটি কার্যকর রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করা।
তিনি বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা খুব ভালো করে উপলব্ধি করি বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত পরিবর্তন দরকার। অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন করতে হবে। তবে, এটা রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।
নির্বাচনের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের কথা তো আমরা বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিশ্বাস করি বলে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে গিয়ে সংস্কার করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও সতর্কবার্তা দেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতিকে দেশের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে অনেক বড় বিপদ আছে, ট্যারিফ অনেক বড় বিপদে ফেলতে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ হিসেবে এটা আমরা বুঝতে পারি। তবে, এটা বলতে পারি দেশের অর্থনীতির স্বার্থে রাজনৈতিক দল সবসময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।