
চীন-জাপান সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনার দোলাচলে, টোকিওর বিরুদ্ধে চীনা যুদ্ধবিমানের আক্রমণ-পূর্ব আচরণের অভিযোগে বেজিংয়ের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে জাপান।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) চীনা রাষ্ট্রদূত উও জিয়াংহাওকে তলব করে ওকিনাওয়ার নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘটে যাওয়া দুই দফা ‘ফায়ার কন্ট্রোল রাডার’ তাক করার ঘটনায় ব্যাখ্যা চায় জাপান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘটনাটিকে “অত্যন্ত দুঃখজনক” এবং গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকির ইঙ্গিত বলে উল্লেখ করেছে।
ওকিনাওয়ার মূল দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব জলসীমায় চীনের জে-১৫ যুদ্ধবিমান জাপানি ফাইটারের ওপর রাডার লক করলে টোকিও কড়া প্রতিবাদ জানায়। যদিও এতে কোনও ক্ষতি হয়নি এবং কেউ হতাহতও নয়, তবুও জাপান বলছে- এ ধরনের পদক্ষেপ কার্যত চীনের “প্রথম আগ্রাসী আচরণ”। বেইজিং অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রাডার লক বলতে এমন পরিস্থিতিকে বোঝায়, যখন কোনও যুদ্ধবিমান বা প্রতিরক্ষা রাডার স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি লক্ষ্যকে শনাক্ত করে, তাকে ফোকাস করে এবং তার গতিবিধিকে অনুসরণ করতে থাকে- যা সম্ভাব্য আক্রমণের পূর্বাভাস হিসেবেই ধরা হয়।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাচি চীনের এমন কর্মকাণ্ডের কড়া জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সমুদ্র ও আকাশপথে নজরদারি বাড়ানোসহ চীনের সামরিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চীন-জাপান উত্তেজনার সূত্রপাত গত ৭ নভেম্বর। সেদিন জাপানি পার্লামেন্টে তাকাচি সতর্ক করে বলেন, চীন যদি তাইওয়ান দখলের চেষ্টা করে, টোকিও চুপ করে বসে থাকবে না। তার ভাষায়, “প্রয়োজনে তাইওয়ানকে সামরিক সাহায্য করা হবে।” এই মন্তব্যের পরই চীন জাপানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক হুমকি উচ্চারণ করে।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাইওয়ান ইস্যুতে “নাক গলানো বন্ধ না করলে” জাপান “ধ্বংসাত্মক সামরিক পদক্ষেপের” মুখোমুখি হবে।
চীনের হুমকির জবাবে জাপান বুধবার ইয়োনাগুনি দ্বীপে ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রস্তুতি শুরু করে, যা তাইওয়ান উপকূল থেকে কাছে।
উত্তেজনা শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক পর্যায়েও তীব্র হয়েছে। চীনও জাপানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে, জাতিসংঘে অভিযোগ জানিয়েছে, নাগরিকদের জাপান ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে এবং জাপানি সামুদ্রিক খাবার আমদানি স্থগিত করেছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও জাপানি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতেও এর প্রভাব পড়েছে।
জাপানের সামরিক মুখপাত্র মিনোরু কিহারা বলেছেন, দেশটি “শান্তিপূর্ণ কিন্তু দৃঢ় অবস্থানে” থাকবে এবং আশেপাশের সমুদ্রসীমায় চীনের উপস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।