
ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে কোন কিছু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় মৌলবাদী, জামায়াত শিবির আখ্যা দেয়া হতো বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বুধবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা এ থেকে বের হয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘অতীতে দেশটা পরিকল্পিতভাবে দুই ভাবে ভাগ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সবার। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে আলাদা করা হবে না। গান, বাজনা ও নাচকে সংস্কৃতি মনে করা হত। এর বাইরে ধর্মীয় সংস্কৃতি আছে সেটাকে আমলে নেয়া হত না।’
তিনি বলেন, ‘পূর্বে ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে কোন কিছু করলে মৌলবাদী, জামায়াত শিবির বলা হত। ১৯৯৩ সালে ‘বিষাদসিন্ধু’ নাটক করার কারণে সৈয়দ জামিল আহমেদকে জামায়াত শিবির ট্যাগ দেয়া হয়েছিল। এর থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে নিয়ে কাজ করব।’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘অপরাধীরা তাঁদের চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়। যে গণহত্যা হয়েছে, এ অপরাধের জন্য অপরাধীরা ক্ষমা চায়নি। গণহত্যায় শহীদদের পরিবারের, আহতদের বক্তব্য নিয়ে আর্কাইভ করা হবে। এ জন্য সবাইকে বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানাব। যখন সবাই ভিডিও বক্তব্য দেবে, পাঠাবে তখন অপরাধীদের ৫০ বছরেও এর দায় পালানোর সুযোগ থাকবে না।’
তিনি বলনে, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ২৪ এর বিপ্লবে রিনিউড হয়েছে। ২৪ এর চেতনায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরো বেগবান হবে। তবে, ফ্যাসিস্টদের বিচারে বিঘ্ন ঘটানোর পক্ষের মত তো অধিকার না।’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে পুলিশ ছিল না। কিন্তু, বড় কোন আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি। তাই, সময দিতে হবে। ভুল হলে ধরিয়ে দিতে হবে।’
সংবা সম্মেলনে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ‘গেল ১৬ বছরে দুইজনকে দেবতা বানিয়েছিল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। একজন হলেন শেখ মুজিবর রহমান, আরেকজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংস্কৃতির দেবতা। তাদেরকে মানুষের কাতারকে নিয়ে আসতে হবে। তবে তাদের অবদানকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। রবীন্দ্রনাথকে এক দল লোক সাম্প্রদায়িক বানিয়েছিল। আর নজরুল সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির প্রতীক।’
তিনি বলেন, ‘এ দেবতাদের থেকে বের হয়ে কাজী নজরুল ইসলামকে সব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা হবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের সব কাজ আর্কাইভ করা হবে। তার নামে ধানমণ্ডির রবীন্দ্রনাথ সরোবরে রেবেল স্কয়ার করা হবে।’
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম বলেন, ‘বই নেয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রী ও সচিবদের ২০ শতাংশ কোটা ছিল। তাদের বই তালিকাভুক্ত করতে হত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের। প্রকৃত লেখকদের বই স্থান পেত না। এক্ষেত্রে নীতিমালা সংশোধন করা হবে।’
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘রাজনীতিকরণ ও সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে এত দিন বহু কাজই করতে পারেনি বাংলা একাডেমি। অনুবাদ, ডিজিটাইজেশনের কাজ নতুনভাবে শুরু করব।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।