
সিলেটের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলমকে নিয়ে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি সারোয়ার আলমের সততা, কর্মনিষ্ঠা ও সাহসিকতার প্রশংসা করেন।
ফেসবুক পোস্টে আসিফ নজরুল লিখেছেন, চলে যাওয়ার দিন ঘটনাটা বলল সারোয়ার। র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অভিযান চালিয়ে একসময় দেশজুড়ে প্রশংসা পেয়েছিল সে। কিন্তু তাতে ক্ষুব্ধ হয় দুর্নীতিবাজ চক্র। তার প্রমোশন আটকে দেওয়া হয় এবং গুরুত্বহীন পদে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। মন খারাপ করে সারোয়ার বসে থাকত তার কক্ষে।
তিনি উল্লেখ করেন, করোনার শেষ দিকে প্রবাসী কর্মীরা ভ্যাকসিনের দাবিতে মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে। কারও আশ্বাসে তারা শান্ত না হলেও সারোয়ার আলমের কথায় তাদের আস্থা জন্মায়। নিচে নেমে তিনি ভ্যাকসিনের সময়সূচি জানালে কর্মীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে চলে যায়। মন্ত্রী-সচিব হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। সারোয়ার নিজ কক্ষে গিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাল। ঘটনাটি বলতে বলতে তার চোখ ভিজে উঠেছিল, লিখেন আসিফ নজরুল।
আইন উপদেষ্টা জানান, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবার আলোচনায় বসে তিনি সারোয়ার আলমকে দেখেন। সাধারণ চেহারার হলেও তিনি সবসময় সক্রিয়ভাবে মতামত দিতেন। এরপরই সিদ্ধান্ত নেন সারোয়ার আলমকে নিজের পিএস করার।
তিনি আরও লেখেন, তাকে আমি স্নেহের চেয়ে বেশি বকেছি। কাজ এগোয় না বলে হতাশ হতাম। অথচ যাকে জিজ্ঞেস করি, উত্তরটা দিয়ে দিত সারোয়ারই। এয়ারপোর্টে যাওয়া বা আসা সবসময় সে পাশে থাকত, যতই নিষেধ করি না কেন।
আসিফ নজরুল বলেন, বেশিরভাগ সরকারি কর্মকর্তা যান্ত্রিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু সারোয়ার আলম ব্যতিক্রম। তার সহায়তা ও উৎসাহে প্রবাসী কর্মীদের ছাড়পত্র ডিজিটালাইজেশন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের জন্য মাল্টিপল ভিসা, জাপান ও কোরিয়ার বাজার উন্মুক্তকরণ, প্রবাসী লাউঞ্জ স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, সিলেটে সাদাপাথর বিতর্কের পর তড়িঘড়ি করে সারোয়ার আলমকে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। আমার সিলেটি বন্ধুদের মাঝে আনন্দের বন্যা দেখি। আমি তো আর আটকাব কোন যুক্তিতে! যোগ করেন তিনি।
তবে এক ধরনের কষ্টের কথাও বলেন আসিফ নজরুল। আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার হতেই পারে। কিন্তু আমাদের সারোয়ার! রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, সম্পূর্ণ পেশাদার একজন মানুষ। তবুও তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হয়েছে। আমি প্রতিকার করতে পারিনি, এ কষ্ট থেকেই যাবে।
পোস্টের শেষে তিনি লেখেন, সারোয়ার আপনাকে মিস করি। দোয়া করি জুনিয়র কর্মকর্তারা আপনাকে দেখে শিক্ষা নিক। কেবল সিলেট নয়, সারা দেশের মানুষ আপনার সততা, সাহস ও কর্মনিষ্ঠার জন্য আপনাকে ভালোবাসে। এ কারণেই আমরা আশাবাদী থাকি।