
২০২৬ সালের হজের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়, যার মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী প্যাকেজটির খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা। বিমান ভাড়ার কিছুটা কমতি থাকায় এবার হজের খরচও তুলনামূলকভাবে কমছে।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই নতুন হজ প্যাকেজগুলোর ঘোষণা দেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছর যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজ চালু ছিল, এবার তা বাড়িয়ে তিনটিতে উন্নীত করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের আগে হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এসব প্যাকেজ অনুমোদন পায়।
২০২৫ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে প্যাকেজ-১ অনুযায়ী খরচ হয়েছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা।
আগামী বছরও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য একটি নির্ধারিত প্যাকেজ চালু থাকবে। হজ এজেন্সিগুলো এই নির্ধারিত সীমার নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমান ভাড়া কমলেও সৌদি আরবে স্বাস্থ্যবিমার হার বেড়েছে ১৩০ সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ২৭০ টাকা। পাশাপাশি মিনার তাঁবুর ভাড়া ৪.২ শতাংশ এবং ‘দমে শোকর’ বাবদ ৭২০ সৌদি রিয়াল, অর্থাৎ প্রায় ২৩ হাজার ৬৫২ টাকা, বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি এবারই প্রথমবার সরকারি হজ প্যাকেজে যুক্ত করা হলো।
সৌদি রিয়ালের বিনিময় হারেও বেড়েছে সামান্য পরিবর্তন; গত বছরের ৩২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে বর্তমানে তা ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা হয়েছে। এসব পরিবর্তনের ভিত্তিতেই ২০২৬ সালের নতুন প্যাকেজগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বছর ঘোষিত তিনটি প্যাকেজ হলো: হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ), হজ প্যাকেজ-২ এবং হজ প্যাকেজ-৩।
হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ):
এই প্যাকেজের আওতায় হজযাত্রীদের মক্কার হারাম শরীফের চত্বর থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া এলাকার ভেতরে থাকা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি রুমে সর্বোচ্চ পাঁচজনের থাকার ব্যবস্থা থাকবে এবং অ্যাটাচড বাথরুম সুবিধা থাকবে। মিনায় তাঁবু হবে জোন-২ এলাকায়, এবং মিনা ও আরাফায় ‘ডি+’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এই প্যাকেজের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।
হজ প্যাকেজ-২:
এই প্যাকেজে মক্কায় হারাম শরীফ থেকে ১.২ থেকে ১.৮ কিলোমিটার দূরত্বে এবং মদিনায় মারকাজিয়ায় থাকার সুযোগ থাকবে। প্রতিটি কক্ষে সর্বোচ্চ ছয়জন হজযাত্রী থাকতে পারবেন, বাথরুম থাকবে অ্যাটাচড। মিনায় তাঁবু থাকবে জোন-২ তে এবং ‘ডি’ ক্যাটাগরির সেবা পাবেন হজযাত্রীরা। এ প্যাকেজের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা।
উল্লেখ্য, প্যাকেজ-১ ও প্যাকেজ-২ গ্রহণকারীরা অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে মক্কা ও মদিনায় দুই বা তিন সিটের কক্ষে অবস্থান এবং শর্ট প্যাকেজ সুবিধা নিতে পারবেন। সাধারণত হজে যাত্রার পর সৌদি আরবে অবস্থানকাল ৩৫ থেকে ৪৭ দিন হলেও, শর্ট প্যাকেজে এটি নেমে আসবে ২২ থেকে ৩০ দিনে।
হজ প্যাকেজ-৩:
সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই প্রথমবারের মতো একটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ চালু করা হয়েছে, যেখানে হজযাত্রীদের মক্কার আজিজিয়া এলাকায় এবং মদিনায় মারকাজিয়া এলাকার বাইরে অবস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি রুমে সর্বোচ্চ ছয়জন থাকার সুযোগ থাকছে। মিনার তাঁবু থাকবে জোন-৫ এ এবং মোয়াল্লেম কর্তৃক ‘ডি’ ক্যাটাগরির সেবা ও খাবার সরবরাহ করা হবে। নামাজ আদায়ের জন্য প্রতিদিন হারাম শরীফে যাতায়াতে এসি বাস ব্যবহারের সুযোগও থাকবে। এই প্যাকেজের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজিজিয়া এলাকায় থাকার সুবিধা সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবারই প্রথমবার চালু হলো। আগে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের যে এলাকাগুলোতে রাখা হতো, সৌদি সরকার সেগুলো ভেঙে ফেলার কারণে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার মতো হজযাত্রীপ্রেরণকারী শীর্ষ দেশগুলো বহু বছর ধরে আজিজিয়ায় হজযাত্রীদের রাখছে।
এছাড়া, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ’ হিসেবে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকায় একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে সরকার। এজেন্সিগুলো এই নির্ধারিত প্যাকেজের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ দুটি অতিরিক্ত প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।
প্রতিদিন খাবারের জন্য ন্যূনতম ৩৫ সৌদি রিয়াল ব্যয় হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এই খরচ হজযাত্রীদের নিজ দায়িত্বে বহন করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী অর্থ সঙ্গে নিতে হবে।
চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ২০২৬ সালের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে অনুমানিক ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে অংশ নিতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।
হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে ২৭ জুলাই থেকে এবং তা চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। নিবন্ধনের জন্য ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী, সুস্থ শরীর ও মানসিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা অংশ নিতে পারবেন। প্রাথমিক নিবন্ধনে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে এবং পুরো প্যাকেজের টাকা জমা দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে।
আসন্ন কার্যক্রম অনুযায়ী, আগামী ৯ নভেম্বর হজ চুক্তি সম্পাদিত হবে। ২০২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়িভাড়া ও পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে। হজ ভিসা ইস্যু শুরু হবে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এবং ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।