
দেড় বছরের টালবাহানার পর গাজা যুদ্ধের অবসানে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি যেন ইসরায়েলি রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তবে এই অধ্যায় শুরু হতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে এক প্রশ্ন—বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কি এখন রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে পারবেন?
আল জাজিরার রাজনৈতিক বিশ্লেষক নূর ওদেহ মনে করেন, “এটা সবারই জানা ছিল যে ইসরায়েল নিজে থেকে এই গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধ করবে না। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর চাপেই নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন।”
তার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের চাপ ছাড়া ইসরায়েলি সরকার কখনোই এই সমঝোতায় আসত না। ওদেহ লেখেন, “ফেডারেল সরকারকে ইসরায়েলকে থামাতে দুই বছর সময় লেগেছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, নেতানিয়াহু চাইলে অনেক আগেই এমন একটি চুক্তি করতে পারতেন—“তিনি এক-দেড় বছর আগেই এই সমঝোতায় পৌঁছাতে পারতেন, কিন্তু একরোখা মনোভাব ও রাজনৈতিক হিসাবের কারণে করেননি। বরং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে একাধিক শান্তি প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেছেন এবং চলতি বছরের মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙেছিলেন। তা বহাল থাকলে তখনই সব ইসরায়েলি বন্দি—জীবিত বা মৃত—মুক্তি পেতেন।”
ওদেহের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার পর সমগ্র কৃতিত্ব এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে চলে গেছে। “সব প্রশংসা, সব কৃতজ্ঞতা এখন ট্রাম্পের দিকে যাচ্ছে, নেতানিয়াহুর দিকে নয়,” মন্তব্য করেন তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর জন্য এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো—রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার উপায় খুঁজে বের করা। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির পর দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। ওদেহ বলেন, “যখন জিম্মিরা মুক্তি পাবে, তখন ফের যুদ্ধে জড়ানো নেতানিয়াহুর জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।”
তবে তিনি আরও বলেন, “নেতানিয়াহু চেষ্টা করবেন যেন যুদ্ধবিরতির এই ধাপ শেষ হতেই তিনি একটি ‘সুবিধাজনক ঘোষণা’ দিতে পারেন—হয় সরকার চালিয়ে যাওয়ার, নয়তো আগাম নির্বাচনের।”
ইসরায়েলের ভেতরে এখন ধারণা তৈরি হয়েছে, গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তি কোনো সামরিক ব্যর্থতার ফল নয়, বরং বিশাল রাজনৈতিক চাপের কারণে নেওয়া সিদ্ধান্ত। দুই বছর ধরে যুদ্ধের “প্রয়োজনীয়তা ও নিরাপত্তা”র যুক্তি দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর অবস্থান এখন আগের মতো শক্ত নয়। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে তার জনপ্রিয়তা কমেছে, আর ট্রাম্পের কূটনৈতিক উদ্যোগ ও শান্তিতে নোবেল পাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুরো পরিস্থিতিকে নতুন দিকে মোড় দিয়েছে।
ওদেহের ভাষায়, “নেতানিয়াহুর সামনে এখন কেবল একটি প্রশ্ন—তিনি কি এই শান্তিচুক্তিকে নিজের রাজনৈতিক টিকে থাকার সিঁড়ি বানাতে পারবেন, নাকি এটি হবে তার পতনের সূচনা?”
গাজা যুদ্ধ থেমে গেলেও, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন নতুন এক সংঘর্ষে প্রবেশ করেছে—নেতানিয়াহুর জোট ও বিরোধীদের ক্ষমতার লড়াইয়ে।
সূত্র: আল জাজিরা