
ইউরোপের দিক থেকে সামরিক চাপ বেড়ে চলায় এবার কড়া প্রতিক্রিয়া দেখালেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ক্রমবর্ধমান সামরিকীকরণের জবাবে রাশিয়া ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠোর’ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সোচি শহরে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতি ফোরামে পুতিন বলেন, ইউরোপের বর্তমান কৌশল রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। তার অভিযোগ, ন্যাটোর পক্ষ থেকে রাশিয়াকে ঘিরে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেগুলো পুরোপুরি ‘অর্থহীন হিস্টেরিয়া’।
“তারা (ন্যাটো) নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে রাশিয়া ন্যাটোতে হামলা চালাবে। যদি সত্যিই বিশ্বাস করে, তাহলে তারা অবিশ্বাস্যভাবে অযোগ্য, কারণ এই বাজে কথায় আস্থা রাখা যায় না। আর যদি না বিশ্বাস করে, তাহলে তারা কেবল অসৎ,” বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
তিনি দাবি করেন, ইউরোপের প্রতিরক্ষা খাতকে জোরদার করার লক্ষ্যেই এই উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। জার্মান সেনাবাহিনীকে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী করার ঘোষণার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “খুব ভালো। আমরা সেটা শুনেছি এবং দেখছি এর মানে আসলে কী।”
পুতিন আরও বলেন, “রাশিয়া কখনো দুর্বলতা বা দ্বিধা দেখাবে না। যা ঘটছে, আমরা তা উপেক্ষা করতে পারি না।”
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর ফলে ইউরোপজুড়ে সামরিক প্রস্তুতি বাড়ছে। এদিকে রুশ ড্রোনের ডেনমার্কের আকাশসীমা অতিক্রম এবং এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ড সীমান্তে অনুপ্রবেশের ঘটনায় যুদ্ধ ইউক্রেন ছাড়িয়ে বিস্তারের আশঙ্কা জোরালো হয়েছে।
ইউক্রেন এবং তার কিছু ন্যাটো মিত্র দেশ অভিযোগ করেছে, রাশিয়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে। তবে মস্কো এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। পুতিন বলেন, ইউরোপ নিজেরাই সামরিক ব্যয় বাড়ানোর অজুহাত হিসেবে এসব অভিযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। তার ভাষায়, “শান্ত হোন, রাশিয়া কোনো হুমকি নয়।”
তিনি বলেন, ইউরোপ এমন একটি নীতির অনুসরণ করছে, যেখানে “নিরন্তর উত্তেজনা বাড়ানো” হচ্ছে। এর ফলেই ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
পুতিন সরাসরি অভিযোগ করেন, “সব ন্যাটো দেশই এখন আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে এবং তারা আর তা লুকাচ্ছে না। গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ ও অস্ত্র পাঠানোর মাধ্যমে তারা বাস্তবে যুদ্ধেই অংশ নিচ্ছে।”
রুশ প্রেসিডেন্ট এ সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, আগস্টে আলাস্কায় তাদের মধ্যে একটি শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। পুতিন বলেন, “ট্রাম্প এমন একজন মানুষ, যিনি কথা শুনতে পারেন।”
তবে মস্কো এখনো ইউক্রেনের সঙ্গে কোনো শান্তিচুক্তির পথ দেখায়নি। বরং তাদের অবস্থান আগের মতোই কঠোর। ক্রেমলিন স্পষ্ট করে জানিয়েছে, কিয়েভকে ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার আশা ত্যাগ করতে হবে এবং কিছু এলাকা রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে।
এদিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নতুন করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় হামলা চালিয়ে ইউক্রেন এক ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খেলা খেলছে। তার ইঙ্গিত, এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের দখলে থাকা পারমাণবিক স্থাপনায় রাশিয়া আঘাত হানতে পারে।