
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা ও নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন দেশের কয়েকটি শীর্ষ রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের মতে, ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি; বরং দেশে বিভাজনের রাজনীতি ও মৌলবাদী শক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: প্রত্যয় ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনায় এসব মন্তব্য উঠে আসে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বারবার গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। জুলাইয়ের রাজনৈতিক পালাবদলের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর ভরসা করলেও তার পক্ষপাতমূলক আচরণে হতাশ হয়েছেন অনেকে। তিনি নির্বাচন নিয়ে দ্বিধান্বিত অবস্থানের সমালোচনা করেন এবং দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান। তিনি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারার ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া অভিযোগ করেন, একটি চক্র এখন একাত্তরের স্বাধীনতার ইতিহাসকে ছোট করে জুলাই অভ্যুত্থানকে গৌরবান্বিত করতে চাইছে। তিনি বলেন, এনসিপি ও জামায়াতের পরামর্শে সরকার চলছে এবং এদের মাধ্যমেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ তৈরি হচ্ছে—যা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলোতে সংবিধানের মৌলিক চার নীতিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, যা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থী।
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার পরিচালনায় যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের মধ্যে খুব কমজনই ‘জুলাই গণ-আন্দোলনে’ সক্রিয় ছিলেন। ফলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বর্তমান সরকার জনসমর্থনের দিক থেকে বড় হলেও বাস্তবে দুর্বল ও অকার্যকর। তিনি বলেন, দেশ এখন সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত চরম সংকটে রয়েছে, যার উত্তরণ সম্ভব কেবল একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ভাষানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু, অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ এবং গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সবাই দ্রুত জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার অসম্ভব।