
ভারতের পাহাড়ি রাজ্য হিমাচল প্রদেশে টানা বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত ২০ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ১৪ দিনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৮৪ জন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক সড়ক।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই রাজ্যে দুর্যোগের ভয়াবহতা বেড়েছে লাগাতার বৃষ্টিপাতে। শুধু প্রাণহানিই নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজ্যটির বহু অংশ। মোট ৩০৯টি সড়ক, যার মধ্যে ৩০৫টি জাতীয় মহাসড়ক, এখনও সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের ২৩৬টি পানি সরবরাহ প্রকল্প এবং ১১৩টি বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার, ফলে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র পানি ও বিদ্যুৎ সংকট তৈরি হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহতদের মধ্যে ১০৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন ভূমিধস (১৭ জন), আকস্মিক বন্যা (৮ জন), মেঘভাঙা বৃষ্টি (১৭ জন), বজ্রপাত (৭ জন) এবং বন্যার পানিতে ডুবে (২০ জন) যাওয়ার মতো ঘটনা থেকে। বাকি ৮১ জন মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়।
সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে মান্দি জেলায়। এখানে বর্ষণজনিত দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন এবং সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও ২৩ জন।
বন্যার প্রভাবে চাষাবাদেও ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজ্যের ৮৮ হাজার ৮০০ একর জমির ফসল একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) জানিয়েছে, শিগগিরই পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা নেই। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন অংশে আগামী কয়েক দিনও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকবে।
হিমাচল প্রদেশের ভৌগলিক অবস্থানই বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক হারে অপরিকল্পিত নগরায়ন, পাহাড় কাটা ও বনাঞ্চল ধ্বংস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এই সংকট নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি মন্তব্য করেছে, “অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন ও বনভূমি উজাড় ঠেকাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যতে হয়তো ভারতের মানচিত্র থেকেই হিমাচল প্রদেশ হারিয়ে যাবে।”
সূত্র: এনডিটিভি অনলাইন