
২০২১ সালের এই উপ-নির্বাচন তিনি কুমিল্লা-৭ আসন থেকে বিনাভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে অনুদান দিয়ে কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছিলেন প্রাণ গোপাল দত্ত এমন তথ্য উল্লেখ করে দুদক ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
২০২১ সালের এই উপ-নির্বাচনে প্রাণ গোপাল ওই আসন থেকে বিনাভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সূচনা ফাউন্ডেশন নামে গড়ে ওঠা ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের নামে ঘুষ আদায় করে তা আত্মসাৎ করেছিল। মামলাটি মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম দায়ের করেন।
দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম মামলার তথ্য নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে সোমবার সাংবাদিকদের বক্তব্য দিয়েছিলেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সূচনা ফাউন্ডেশন ১৪টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে মোট ১৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা গ্রহণ করেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে ঘুষ প্রদানকারীদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ২০২১ সালে কুমিল্লা-৭ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ওই অর্থ ফাউন্ডেশনকে ঘুষ ও অবৈধ পারিতোষিক হিসেবে দিয়েছেন।
দুদক জানিয়েছে, ২০২২ সালের ৫ আগস্ট থেকে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থা। ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাদের আয়কর অব্যাহতি বাতিল করে।
এই বছরের ২৯ জানুয়ারি দুদক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অস্তিত্বহীন ঘোষণা করে। সরজমিন পরিদর্শনে কোনো কার্যক্রমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, পুতুলসহ অন্যান্য আসামিরা সূচনা ফাউন্ডেশন নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠান গঠন করে এনজিও ব্যুরো ও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদানের নামে ঘুষ আদায় করেছেন। তবে তহবিল প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ৯৩০ কোটি ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫৯ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এছাড়া ২০১৫-১৬ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত মোট ৯৯ লাখ ৪ হাজার ৫৩১ টাকার কর জমা না দিয়ে প্রতারণা করেছেন। এছাড়া তারা ৪৪৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার ১৯৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সূচনা ফাউন্ডেশনের ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন ট্রাস্টি সায়মা ওয়াজেদ, মাজহারুল মান্নান, সাবেক বিসিবি সভাপতি ও এমপি নাজমুল হাসান পাপন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রাণ গোপাল দত্তসহ অন্যান্যরা।
এছাড়া ব্যবসায়ী হিসেবে আটজন এবং এনবিআরের ১৬ কর্মকর্তাকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সূচনা ফাউন্ডেশন ২০১৪ সালে মানসিক ও স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এ বছর ১২ জুলাই পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে পাঠানো হয়। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ডব্লিউএইচও আঞ্চলিক পরিচালক নির্বাচিত হন এবং ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।