
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিনিয়র আইনজীবী ফজলুর রহমান সোমবার (২৫ আগস্ট) হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে জাতির কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, অপমৃত্যু কি আমার প্রাপ্য?
তিনি জানান, একাত্তর সালে আমি কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি, দেশের জন্য লড়াই করেছি। আমি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং ৪৯ বছর ধরে উকালতি করছি।
ফজলুর রহমান বলেন, গতকাল থেকে কিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে, তাদের জন্য আমি দোয়া করি, আল্লাহ তাদের বাঁচিয়ে রাখুক এবং উন্নত করুক। তাদের প্রতি আমার কোনো হিংসা নেই।
তিনি আরও জানিয়েছেন, তার দলের পক্ষ থেকে গতকাল রাত নয়টায় তার নামে শোকজ নোটিশ পৌঁছেছে। তিনি বলেন, দল যদি মনে করে আমি কোনো ব্যতিক্রম বক্তব্য বা কাজ করেছি, তবে শোকজ নোটিশ স্বাভাবিক। আমি দলের কাছে জবাব দেব এবং দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা মেনে নেব।
সকাল থেকেই তার বাসার নিচে ৭-৮ জন ব্যক্তি বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে জানিয়ে ফজলুর বলেন, তারা স্লোগান দিচ্ছে ফজলুকে হত্যা করো, ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করো। তারা বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেছে। আমি ভাড়া বাসায় থাকি। আমি শঙ্কায় আছি, বাসার মালিক আমাকে আর থাকতে দেবেন কি না।
তিনি আরও বলেন, আমি এ দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। ৬১ বছর ধরে রাজনীতি করি। এ দেশে নির্বিঘ্নে বাঁচার অধিকার আমার আছে। এটি আমার সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার। কিন্তু আজ তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাকে হত্যা করতে চাওয়া হচ্ছে। গত রাতে দেখলাম, তারা সবাই জামাতের লোক, তারা বলছে, ফজলুর রহমানকে হত্যা করতে হবে। আমার মৃত্যু ভয় পাই না, তবে অপমৃত্যু আমার প্রাপ্য নয়।
ফজলুর রহমান বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে প্রশ্ন তোলেন, ৫৪ বছর আগে আমি আপনাদের জন্য যুদ্ধ করেছি। আজ যে সন্তানরা আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে, তাদের জন্যই আমি স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করেছি। তাই জানতে চাই, আমার অপমৃত্যু কি কাম্য? যদি আমার কথায় কেউ মনে করে আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, মামলা করুন, গ্রেপ্তার করুন, শাস্তি দিন। কিন্তু আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বাসার সামনে মব সৃষ্টি চলবে কি না, তা আমি দেশের মানুষের কাছে জানতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতিকে আহ্বান জানান, তার বিরুদ্ধে সৃষ্ট মবের প্রতিবাদ করতে এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও অনুরোধ জানান। এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তার নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এক প্রশ্নের উত্তরে ফজলুর বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। জামায়াত যদি সঠিক পথে আসে, পূর্বপুরুষদের করা কাজ ভুলে এগিয়ে আসে, তাতে আমার আপত্তি নেই। তবে তারা একাত্তর সালের যুদ্ধকে ‘ভাইয়ে ভাইয়ে গণ্ডগোল’ বা চক্রান্তকারীদের কর্মকাণ্ড বলছে, এ নীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান স্পষ্ট। আমি কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। অন্যায় করলে আমার নামে মামলা হবে, আমি জেলে যাব।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ‘কালোশক্তি’ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ফজলুর রহমান বলেন, আমি আন্দোলনকারীদের কালোশক্তি বলিনি। যেখানে বলেছি, দেখান। ইউটিউবে অনেক কিছু কেটে বক্তব্য ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে। পুরো বক্তব্য দেখাতে হবে।