
কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের অধিকাংশ কার্যক্রম এখন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর দ্বারা। তার মতে, বেশিরভাগ রোগীর চিকিৎসা প্রেসক্রিপশন কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়।
শনিবার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) আয়োজিত ‘অপার সম্ভাবনার নার্সিং পেশা: বৈষম্য, প্রতিবন্ধকতা, হতাশা, সরকার ও প্রশাসনের দায় ও সমাধানে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, ১৯৮০-এর দশকে বেসরকারিকরণ শুরু হওয়ার পর থেকেই স্বাস্থ্য খাতে দুরবস্থা শুরু হয়। বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এবং প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসকরা এখন কোম্পানির চাহিদা অনুসারে প্রেসক্রিপশন লেখতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে ওষুধের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাত যখন কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তখন নার্সদের গুরুত্ব অনেক কমে গিয়ে শ্রমিকের স্তরে নেমে আসে। প্রাইভেট খাত কখনোই নার্সদের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়। যদিও তিনি প্রাইভেট সেক্টরের বিপক্ষে নন, তবে এটিকে ‘ইতিবাচক’ বলা যায় না।
ফরহাদ মজহার বর্তমান সময়ের অসংক্রামক রোগের সংখ্যা উল্লেখ করে বলেন, দেশের ৬৭ শতাংশ রোগই অসংক্রামক। এই রোগগুলো প্রতিরোধে নার্সদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যকলাপ, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও জনসচেতনতা বিষয়ে নার্সদের কাজ করলে অনেক রোগের প্রতিরোধ সম্ভব। তার মতে, শুধুমাত্র ওষুধের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।
নার্সদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন এবং বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের মূল রক্ষাকর্মী নার্সেরা। অথচ দেশে এখনো চিকিৎসাকে কেবল চিকিৎসকের বিষয় হিসেবে দেখা হয়। স্বাস্থ্যসেবায় নার্সিং পেশাকে কেন্দ্রীয় স্থান দিতে হবে। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় ডাক্তার-কেন্দ্রিক ধারণা সাম্প্রতিক সময়ে এসেছে, আগে এমনটা ছিল না।”
নার্সিং পেশাকে ‘মহৎ’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, যদি নার্সদের পেশাগত মর্যাদা, প্রশিক্ষণ এবং সম্মান নিশ্চিত না করা হয়, তবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করা সম্ভব হবে না।
এ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম, মহাসচিব আসাদুজ্জামান জুয়েল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক জরিনা খাতুন।