
ইসরায়েলের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করা আরও ৩০ ফিলিস্তিনি বন্দির মরদেহ ফেরত পাঠানো হয়েছে গাজায়। শুক্রবার ৩১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির তত্ত্বাবধানে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়। আল জাজিরার শনিবারের (১ নভেম্বর) প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ফেরত পাওয়া অনেক মরদেহে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পরও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবারের আক্রমণে অন্তত তিন ফিলিস্তিনি নিহত হন।
ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, পূর্ব গাজা শহরের শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে একজন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরেকজন আহত হন। একই দিন জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে গুলিতে আরও একজন প্রাণ হারান। আহত অবস্থায় আরেক ফিলিস্তিনিও পরে মারা যান।
মধ্য গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আজ-জাহরা এলাকায় আবু মেদিন পরিবারের একটি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও এক ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসেও শুক্রবার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বিভিন্ন ভবনে হামলা চালায়।
অক্টোবরের শুরুতে স্বাক্ষরিত বন্দি-বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবেই এই মরদেহগুলো ফেরত দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ এই হস্তান্তরের পর ইসরায়েল থেকে পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের মরদেহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৫।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, “মেডিকেল টিমগুলো আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী মরদেহ শনাক্তের কাজ করছে এবং প্রতিটি মরদেহ নিবন্ধনের আগে পরিবারের সদস্যদের অবহিত করা হয়েছে।”
চিকিৎসা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ফেরত পাওয়া বহু মরদেহে নির্যাতনের দাগ ছিল। কারও চোখ বাঁধা, কারও হাতকড়া পরানো ছিল। অনেক দেহ পচে গেছে বা পুড়ে গেছে, আবার কিছু মরদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও দাঁত অনুপস্থিত ছিল।
ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে বর্তমানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছে। এদের অনেককেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই আটক রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব কারাগারে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে আসছে, এবং গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এসব ঘটনা আরও বেড়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি।
মার্কিন মধ্যস্থতায় সম্পন্ন যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস ২০ জন জীবিত বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। একইসঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার কিছু নগরকেন্দ্র থেকে আংশিকভাবে প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে।
তবে ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতির পরও গাজা জুড়ে ইসরায়েলের বোমা হামলায় বহু মানুষ নিহত হচ্ছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বিমান হামলায় ৪৬ শিশু ও ২০ নারীসহ ১০৪ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।