
রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশ, যা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিচ্ছে। পাঁচদিনব্যাপী এই মহড়ার নাম “জাপাদ-২০২৫”। মহড়াটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সামরিক মহড়ায় সম্ভাব্য হামলার পরিস্থিতিতে কৌশলগত প্রস্তুতি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা যাচাই করা হয়।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়ায় অংশ নিতে তারা ৬৫ জন সেনা পাঠিয়েছে। ভারতের কুমাওন রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়ন নেতৃত্বে এই বাহিনী মহড়ায় অংশ নেয়। এতে ভারত-রাশিয়ার সামরিক সম্পর্কের দৃঢ়তা স্পষ্ট হয়েছে, যা ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে সামরিক পোশাকে হাজির হয়ে বলেন, “আজ আমরা জাপাদ-২০২৫ কৌশলগত মহড়ার চূড়ান্ত অংশ পরিচালনা করছি।”
এই মহড়ায় প্রায় এক লাখ সেনা অংশ নেয়, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত বোমারু বিমান ও যুদ্ধজাহাজ প্রদর্শন করা হয়। এটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ন্যাটোর সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে; বিশেষ করে গত সপ্তাহে একটি রুশ ড্রোন পোল্যান্ডে ভূপাতিত হওয়ার পর।
রুশ সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, ভারত ছাড়াও ইরান, বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) এবং মালি সামরিক পর্যায়ে অংশ নিয়েছে এই মহড়ায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হতে পারে। ওয়াশিংটনের কাছে ভারত শুধু একটি কৌশলগত মিত্র নয়, বরং চীনের প্রভাব প্রতিহত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবেও বিবেচিত।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা বেড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়ে। একই সঙ্গে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ভারতকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পরোক্ষ সমর্থক হিসেবে দেখা হচ্ছে ওয়াশিংটনে।
চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করেন, ভারত ও রাশিয়া যেন “গভীর অন্ধকার চীনের” কাছে নতিস্বীকার করছে। তবে গত সপ্তাহে তিনি ‘এক্স’-এ জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত শুল্ক-সংক্রান্ত বিরোধের সমাধানে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর অত্যধিক শুল্ক আরোপ করছে।
এই বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রাকৃতিক অংশীদার।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আলোচনার মাধ্যমেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত এর আগেও রাশিয়ার সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ২০২১ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণের আগেই, ভলগোগ্রাদ অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী এবং প্রচলিত যুদ্ধ অনুশীলনে অংশ নেয় ভারতীয় বাহিনী।
আল জাজিরা আরও জানায়, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বহু পুরোনো; সোভিয়েত আমল থেকেই ঘনিষ্ঠ। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও, সামরিক সরঞ্জামের বড় অংশ সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেই আমদানি করত। এখনো ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বড় একটি অংশ আসে রাশিয়া থেকে, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি সরবরাহ উৎসে বৈচিত্র্য আনতে চেষ্টা করছে।
তাস জানিয়েছে, এ বছরও ইরান মহড়ায় অংশ নিয়েছে, যদিও দেশটির সরকারিভাবে তা নিশ্চিত করেনি। ইরান রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে শাহেদ আত্মঘাতী ড্রোন সরবরাহ করেছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও দিচ্ছে রাশিয়াকে।
চলতি বছর তেহরান ও মস্কোর মধ্যে একটি “সামগ্রিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি” স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা সামরিকসহ বিভিন্ন খাতে সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।