
ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নীতিমালা চূড়ান্ত করতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক-মালিকরা। ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশ পুনর্বিবেচনাসহ লাইসেন্স ও রুট পারমিট দিতে নীতিমালার বিষয়ে সুরাহা করতে এ সময় বেঁধে দেয় ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত সমাবেশে এ আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সংগঠনের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বলেছেন, ‘একটা নীতিমালা তৈরি করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের লাইসেন্স দেয়া, রুট পারমিট ও সড়কে পৃথক লেনের দাবিতে তাদের সংগঠন ১২ বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। গেল ৬ জুলাই বিআরটিএ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, আমাদের দাবিটা যৌক্তিকভাবে পরিচালনা করছে। গেল ২৪ অক্টোবর আমাদের জানানো হল নীতিমালা চূড়ান্ত হয়ে আছে। আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি, কিন্তু প্যাডেলচালিত রিকশাচালকদের একটি সংগঠন রিট করল। পেটে লাথি মেরে কোন রিট হতে পারে না।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একটা নীতিমালা করে লাইসেন্স দিয়ে, নিবন্ধন করে রুট পারমিট দিয়ে দিন। যখন লাইসেন্স আর রুট পারমিটের বিষয়টি আসবে তখনই নিরাপত্তার বিষয়টি চলে আসবে। তাই, নীতিমালাটা অবিলম্বে সাত দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করুন। নয়তো আগামী ৩০ নভেম্বর ঢাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সাথে সংহতি জানিয়ে দেশের ৬৪ জেলায় সমাবেশ করা হবে।’
সমাবেশে খালেকুজ্জামান লিপন আরো বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল না করতে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় এখনো বহাল রয়েছে। তারপর হাইকোর্ট কীভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে রায় দেয়? সুপ্রিম কোর্টের যে রায় আছে, তার ফলে হাইকোর্টের রায় এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়। ২০২২ সালের এপ্রিলে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন মহাসড়কে উঠতে পারবে না বলে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। এর ফলে, মহাসড়ক ছাড়া অন্য সব সড়কে এই যানগুলো চলার বৈধতা পায়।’
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) উচ্চ আদালত থেকে ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ আসে। এর পর দিনই ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখার দাবিতে দয়াগঞ্জ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা।
এ নিয়ে খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, ‘আমরা মহাসড়কে উঠতে চাই না। বাইলেন সার্ভিস করে দিন। আমরা ধৈর্য ধরে আন্দোলন করছি, এখনও পুরো দেশে করি নাই। পুরো দেশে প্রায় ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশার সাথে তিন কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। তাই, আপনারা হুঁশিয়ার হয়ে যান। অবিলম্বে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’
বলে রাখা ভাল, গেল মে মাসে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত কোন রিকশা চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকার সাবেক দুই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুল ইসলামও সিটির মধ্যে এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছিলেন। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় সড়ক অবরোধ করেন চালকরা ও গ্যারেজ মালিকরা। পরে ‘জীবিকার’ বিষয়টি বিবেচনায় এনে ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করবে পারবে বলে ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একইভাবে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের পর সড়ক-রেলপথ অবরোধ করা হয়। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশের প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন চালকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে রিকশাচালকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়।