
দীর্ঘদিন স্থবির অবস্থার পর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আবারও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। মঙ্গলবার দিল্লিতে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ভারত এই বৈঠককে আনুষ্ঠানিক আলোচনা নয় বলে জানিয়েছে, তবে এটি সম্ভাব্য সমঝোতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য আলোচক ব্রেন্ডন লিঞ্চের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দিল্লিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। ভারতের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজেশ আগরওয়াল। তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এটি নতুন করে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক নয়। তবে অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে প্রচেষ্টার একটি অংশ।”
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে আলোচনা থেমে যায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ শুল্ক আরোপকে ভারতের রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল ও অস্ত্র কেনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। ভারত এই সিদ্ধান্তকে অন্যায্য উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করে।
এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে অস্বাভাবিক টানাপোড়েন তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারত মূলত পোশাক, চিংড়ি, রত্ন ও অলংকার রপ্তানি করে থাকে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে এসব পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং তা কর্মসংস্থানেও প্রভাব ফেলে।
সম্প্রতি বার্তায় ইতিবাচক সুর
তবে গত কয়েক সপ্তাহে দুই দেশের পক্ষ থেকেই সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আলোচনা করছে।” জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার।”
বাধা হয়ে আছে কৃষি ও দুগ্ধ খাত
বাণিজ্য চুক্তিতে বড় অন্তরায় হয়ে রয়েছে কৃষি ও দুগ্ধ খাত। বহু বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কৃষি বাজারে প্রবেশাধিকার দাবি করে আসছে। ওয়াশিংটনের মতে, ভারতের কৃষি খাত একটি বড় সম্ভাবনাময় বাজার হলেও ভারত খাদ্য নিরাপত্তা ও কোটি কোটি ক্ষুদ্র কৃষকের জীবিকার কথা বলে এ খাতকে সুরক্ষিত রেখেছে।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি বাজার উন্মুক্ত করলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাদের মতে, কৃষি ও দুগ্ধ খাতে ছাড় দেওয়া মানেই হবে ক্ষুদ্র কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থে আঘাত।
চুক্তির সম্ভাবনা কতটা?
গত মাসে শুল্ক আরোপ ও রাশিয়া ইস্যুতে দ্বন্দ্বে আলোচনা ভেস্তে গেলেও এবারকার বৈঠক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এখন নজর থাকবে, কৃষি ও দুগ্ধ খাতের মতো সংবেদনশীল ইস্যুগুলোর সমাধানে দুই দেশ কতটা অগ্রসর হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক কৌশলগতভাবে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, শেষ পর্যন্ত উভয় দেশই সমঝোতার পথে এগোবে। তবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ ও স্বার্থের কারণে চূড়ান্ত চুক্তি হতে আরও সময় লাগতে পারে।