
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আবারও সরব হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, “দেশের অবস্থা শেখ হাসিনা ১২টা বাজিয়েছে, এ সরকার চব্বিশটা বাজায়ে দিসে।”
শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এসব মন্তব্য করেন তিনি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা এই সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, “অনেক কিছু আছে বলার মতো, আমি এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার এই অবস্থান থেকে কথাগুলো বলতে পারছি না।” তিনি ইঙ্গিত দেন, বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আপাতত প্রকাশ করছেন না। “আরও অনেক কিছু আছে। দেশের কোন দিক দিয়ে ক্ষতি হয়েছে, কারা কীভাবে কোথায় আত্মসাৎ করেছে, কত টাকা লুট করেছে, কত টাকা খেয়েছে-এই কথাগুলো কিন্তু বলতে পারি। প্রমাণসহ সবকিছু আছে। কিন্তু আমি এখন বলতে চাই না, আমার অবস্থান থেকে।”
সরকার বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে নানান বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “যেখানেই খুন, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি সেখানেই বিএনপির নাম বলছে একটি দল। জনগণের সামনে আমাদেরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা আমরা খুব ভালো বুঝি।”
নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে উদ্দেশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, “আপনাদের যেমন খায়েশ আছে ক্ষমতায় যাওয়ার, আমাদেরও তেমন ইচ্ছা আছে। যদি জনগণ ভোট দেয়, ক্ষমতায় যাবো; যদি না দেয় মেনে নেব আপনাদের। কিন্তু আমরা ভোট চাই। এই ভোটের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য গত ১৭ বছর বিএনপি আন্দোলন করেছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক দল মুখে নির্বাচনের কথা বললেও আসলে তারা ভোটে যেতে চায় না। “তারা নির্বাচনের কথা মুখে বলে, কিন্তু অন্তরে তারা নির্বাচনের কথা বলে না। কারণ তাদের ধারণা জন্মেছে নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় বসবে। কিছু কিছু দল নির্বাচন যাতে না হয় সে জন্য ছুতা বের করে।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস টেনে তিনি বলেন, “অনেকে বলেন ৩৬ দিনের আন্দোলনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বার স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে একবার, ১৯৭১ সালে। লক্ষ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে।” তিনি আরো বলেন, “যেটা হওয়া উচিত সেটা হচ্ছে, জুলাই-আগস্টে যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, সে প্রশাসনের লোক হোক, সাধারণ মানুষ হোক, শেখ হাসিনা হোক কিংবা অন্য কেউ হোক, তাদের বিচারটা করা দরকার খুব জরুরি।”
বিচার ও নির্বাচনের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই বলেও মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস। “বিচারকাজ খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয় না। বিচার ও নির্বাচন পাশাপাশি চলবে। দুটো পাশাপাশি চলতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু বিচারের আগে নির্বাচন হওয়া যাবে না এগুলো বলবেন না।”
আওয়ামী লীগকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, “ভারতে বসে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। দেশে একটা অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। দেশে নির্বাচন হতে দেবে না, এমন একটা ভাবসাব তাদের ভেতরে আছে।”
জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শওকত আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম, জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক এম এ মালেক, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হেলাল উদ্দীন এবং গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজের পিতা আব্দুর রব মিয়া প্রমুখ। আলোচনার পর অনুষ্ঠানে জাসাসের শিল্পীরা অংশ নেন এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়।