
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার বাংলা রাজ্যকে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত করছে এবং বাংলাভাষী শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে অপমান ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, অনেক শ্রমিককে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে অসম্মান করা হচ্ছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) জলপাইগুড়িতে এক জনসভায় এসব অভিযোগ করেন তিনি। সভায় মমতা বলেন, বাংলা নিজ শক্তিতে এগিয়ে যাবে এবং বাংলার ভবিষ্যৎ গড়বে বাংলার মানুষ নিজেরাই।
তিনি বলেন, “ভাষার জন্য কাউকে অপরাধী বানাতে দেব না। রাজবংশী ভাষায় কেউ কথা বললে সেটা অপরাধ নয়। আমরা মাতৃভাষায় কথা বলব, অন্য ভাষাও শিখব। কিন্তু বাংলায় কথা বললেই যদি বাংলাদেশি বলা হয়, সেটা আমরা মেনে নেব না।”
আসাম, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়িতে এনআরসির নোটিশের প্রসঙ্গ টেনে মমতা জানান, আদিবাসী মেয়েরাও এই নোটিশ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। তার মন্তব্য, “বাংলার মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যেই ২৪ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি বলেন, “বাংলায় দেড় কোটি বাইরের শ্রমিক কাজ করছে। আমরা তাদের কিছু বলি না, তারা সব প্রকল্পের সুবিধা পান। তাহলে আমাদের মানুষ অন্য রাজ্যে গেলে কেন তাড়ানো হবে? কেন মারধর করা হবে?”
মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প, সর্বশিক্ষা মিশন, রাস্তা সংস্কার ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সবক্ষেত্রেই কেন্দ্র রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ আটকে রেখেছে বলে তার অভিযোগ।
তিনি বলেন, “আমরা দিল্লির দয়া চাই না। ভিক্ষা চাই না। বাংলার উন্নয়ন বাংলার মানুষই করবে।” প্রধানমন্ত্রীর নাম না করে তাকে উদ্দেশ করে মমতা বলেন, “যিনি জাতপাতে ভাগ করেন, তিনি কখনও দেশের নেতা হতে পারেন না।”
বাংলাকে গুজরাতের আদলে গড়ে তোলার চেষ্টার বিরোধিতা করে মমতা হুঁশিয়ারি দেন, “বাংলাকে গুজরাতে পরিণত হতে দেব না। যতদিন বাঁচব জয় বাংলা বলব।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তরবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা তুলে ধরে মমতা রাজনৈতিক সমর্থন জোরদার করতে চাইছেন। কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক দ্বন্দ্বকে সামনে রেখে তিনি নিজেকে বাংলার রক্ষাকর্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
তবে বিরোধীদের মতে, এসব কৌশল মূলত নির্বাচনী উদ্দেশ্যপ্রসূত। তারা বলেন, শ্রমিকদের বাস্তব পরিস্থিতিতে তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। তবু সমর্থকদের মতে, অন্তত মমতা সমস্যা দৃঢ়ভাবে তুলছেন, যা ভবিষ্যতে সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।