
ইসলামী দলগুলো একসঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে স্থানীয় নির্বাচন ও পরে জাতীয় নির্বাচনের দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে গোপালগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশকে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টা জুন মাসে নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তার এক/দুই মাস এদিক ওদিক হওয়া কোনো বড় ব্যাপার নয়। ব্যাপার হলো শুষ্ঠু নির্বাচান। আওয়ামী লীগ আমলের মতই যদি নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদের মানুষ কেন রক্ত দিয়েছে? এক জনের পরিবর্তে আরেকজনকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য মানুষ জীবন দেয় নাই। মানুষ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে। এ জন্য আমরা বলেছি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রোজার আগে অথবা পরে নির্বাচন দেওয়ার জন্য।
প্রতিবেশি দেশ ভারতের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা বিবৃতি দিয়েছেন, সবাইকে নিয়ে ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচনের জন্য। এ দেশে কখন নির্বাচন হবে এটা আপনাদের ভাবার কোনো বিষয় নয়। আমাদের নির্বাচন নিয়ে কেন আপনারা কথা বলেন। এ দেশের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন বারবার। বাংলাদেশর মানুষ কোনো ষড়যন্ত্র এবং কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেবে না।
তিনি আরো বলেন, বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী সরকারের সবচেয়ে বেশি জুলম নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে ক্রস ফায়ারে নামে হত্যা করা হয়েছে। আয়নাঘরে নিয়ে গুম করে খুন করা হয়েছে। তারা চেয়েছিল এ দেশ থেকে ইসলামকে নির্মূল করতে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র, জনতা, কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষ, বাংলাদেশর সকল শ্রেণি-পেষার মানুষ, দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারের নায়িকা শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। দেশের মানুষ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা লাভ করেছে, নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে।
অন্তবর্তিকালীন সরকারের কাছে দাবি করে তিনি আরো বলেন, অবিলম্বে শেখ হাসিনা সরকারের চালানো গণহত্যার বিচার করতে হবে। সরকারের ভেতরে ও বাইরে ফ্যাসিবাদের দোসর এখনও যারা আছে, যারা অন্তবর্তিকালীন সরকার এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত। এই ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই ফ্যাসিবাদের দোষরদের অনেকেই আর একটি দলের ঘাড়ে ভর করে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এটা প্রাশাসন ও সরকার জানে। তাদের চিহ্নত ও গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের প্রয়োজনে গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার করতে হবে। তাদের রায় কার্যকর করতে হবে। জাতিসংঘ জুলাই বিপ্লাবের গণহত্যার ওপর যে তদন্ত করেছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে পরিস্কারভাবে তারা বলেছেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং প্রাশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মাকর্তাদের সমন্বয়ে এ গণহত্যা পরিচালিত হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী থেকে অমুসলিম প্রার্থী দেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াত বাংলাদেশের গণ মানুষের দল। সুতরাং সবাই যদি জামায়াতের প্রার্থী হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই। প্রার্থী হিন্দু হোক আর মুসলীম হোক তাকে অবশ্যই সৎ হতে হবে। জামায়েতের কোনো প্রর্থী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না।
জামায়াতে ইসলামী গোপালগঞ্জ জেলা শাখার আমির অধ্যাপক রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ফরিদপুর জেলা আমীর মাও: বদরুদ্দীন, সাবেক গোপালগঞ্জ জেলা আমীর অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন সরদার।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাও: আব্দুল হামীদ, জেলা নায়েবে আমীর, অধ্যাপক আ: ওয়াহাব মোল্যা, পৌর আমীর মাও: ইনামুল হক খান, প্রচার সম্পাদক কাজী ইজাহারুল ইসলাম, ফরিদপুরের পৌর আমীর এহসানুল মাহাবুব রুবেল প্রমুখ।
জামায়াতে ইসলামী গোপালগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে জেলার ৪৫৩ টি ইউনিটের সভাপতি ও সেক্রেটারী যোগ দেন।