
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘ইমাম মাহদি’ দাবি করা নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র মাজারে হামলা চালিয়ে মরদেহ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি এ ঘটনাকে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চরম ব্যর্থতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের দায়িত্বহীনতার প্রতিফলন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এনসিপি জানায়, “গোয়ালন্দে ‘ঈমান-আকিদা রক্ষা কমিটি’ নামক ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে কিছু উগ্র-উত্তেজিত জনতা মাজারে গিয়ে ভাঙচুর চালায় এবং মরদেহ তুলে পুড়িয়ে ফেলে, যা একটি ঘৃণ্য ও অমানবিক অপরাধ।”
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, উক্ত কমিটির সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং স্থানীয় আলেম সমাজের সংশ্লিষ্টতা ছিল। তাদের অভিযোগ, নুরুল হককে শরিয়তবিরোধীভাবে কাবা শরিফের আদলে নির্মিত কালো ঘরে দাফন করা হয়। এ ঘটনাকে ধর্ম অবমাননা হিসেবে দাবি করে তারা বিক্ষোভে নামে।
এনসিপি অভিযোগ করে, সহিংসতার ইঙ্গিত তিন দিন আগেই পাওয়া গেলেও প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। দলটির মতে, এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার স্পষ্ট উদাহরণ। পাশাপাশি ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করায় মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে এনসিপি।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই হামলা শুধু ফৌজদারি অপরাধ নয়, বরং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের ওপরও সরাসরি আঘাত। দলটির দাবি, ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ঢাকার তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল এবং সর্বশেষ রাজবাড়ীর ঘটনা—এসব মিলিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরির এক ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এনসিপির দাবি, এসবের পেছনে একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত সক্রিয় রয়েছে।
“এই অস্থিরতা পতিত ফ্যাসিবাদী বয়ান এবং ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থানের পাঁয়তারা হতে পারে,”— উল্লেখ করে দলটি নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানায়।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, “নতুন বাংলাদেশের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এ ধরনের অস্থিরতা দমন করা এবং গোপন ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।”