
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে নতুন কর্মপরিকল্পনা এনডিসি ৩.০ কার্যকর করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তার মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ২৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন শর্তহীন এবং ৯০ দশমিক ২৩ বিলিয়ন শর্তসাপেক্ষ বিনিয়োগ প্রয়োজন।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত থার্ড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশান (এনডিসি ৩.০) ভ্যালিডেশন ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৯২ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন (৬.৩৯ শতাংশ) শর্তহীনভাবে এবং ৫৮ দশমিক ২ মিলিয়ন টন (১৩.৯১ শতাংশ) শর্তসাপেক্ষে হ্রাস করার রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, এনডিসি ৩.০ কেবল নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা নয়; বরং এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ গড়ার অঙ্গীকার। এজন্য নারী, শিশু, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও জলবায়ু-অভিবাসীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তরুণদের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ উদ্যোক্তা উদ্যোগ, গবেষণা এবং সচেতনতা কার্যক্রমে তাদের যুক্ত করা গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি জলবায়ু সহনশীল বাংলাদেশ তৈরি করা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য, পানি-স্যানিটেশন, শিক্ষা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও অবকাঠামো প্রতিটি খাতকে জলবায়ু সহনশীল করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় জলবায়ু শিক্ষা ও সবুজ দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের সময় ‘জাস্ট ট্রানজিশন’ নিশ্চিত করা জরুরি। এতে শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি খাত, গবেষক ও নাগরিক সমাজ সবার অভিন্ন প্রচেষ্টা ছাড়া টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু সহনশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান এবং সঞ্চালনা করেন যুগ্মসচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) ধরিত্রী কুমার সরকার।
আলোচনায় দেশি-বিদেশি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।