
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আদালতে দায় স্বীকার করেছেন প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল দাউদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তার শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা।
বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে পল্টন থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক রোকনুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, "জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।"
এর আগে একই মামলায় প্রধান আসামি ফয়সল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের বাবা-মাও অপরাধে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তির পর বিচারক উভয়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। উল্লেখ্য, গত ১৭ ডিসেম্বর ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা হাসি বেগম ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই দফায় মোট ৯ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশ সাহেদা পারভীন সামিয়া, ওয়াহিদ আহমেদ ও মারিয়া আক্তার লিমাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আসামিদের স্বীকারোক্তি রেকর্ডের আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা মামলার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং তারা স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে তাদের বক্তব্য দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি গ্রহণ জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে সাহেদা পারভীন সামিয়া ও ওয়াহিদ আহমেদ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম জুনায়েদের আদালতে জবানবন্দি দেন। অন্যদিকে মারিয়া আক্তার লিমা ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দীনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
এর আগে ১৫ ডিসেম্বর আদালত এই তিন আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ২০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় আরও চার দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেন।
শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনা সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ বর্তমানে পলাতক নাকি দেশে অবস্থান করছেন, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
মামলার নথি অনুযায়ী, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তরা শরিফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়।
পরদিন ১৯ ডিসেম্বর হাদির মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০ ডিসেম্বর লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি সৌধসংলগ্ন স্থানে তাকে দাফন করা হয়।