
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আমবাগান এলাকার মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক সাগরের জীবন যেন এক হৃদয়বিদারক বাস্তব কাহিনি। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সে হারিয়েছে মা-বাবা দুজনকেই। এখন একাকী সাগর প্রায়ই খাবারের অভাবে চলে যায় ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় কবরস্থানে, যেখানে শুয়ে আছেন তার প্রিয় বাবা-মা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে বসে কাঁদে আর চিৎকার করে বলে, “মা, আমাকে ভাত দাও!”
সম্প্রতি ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় কবরস্থানে সাগরের কান্নার এমন এক দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
২৬ বছর বয়সী সাগর মৃত সুরুজ মিয়া ও তার স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। ছোটবেলা থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সে পুরোপুরি বাবা-মায়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুর এক মাস পর মা-ও চলে গেলে জীবনের সব আশ্রয় হারায় সাগর। এখন তার পাশে নেই কোনো আত্মীয় বা অভিভাবক, কেউ নেই দেখাশোনার মানুষও।
স্থানীয়রা জানান, ক্ষুধার জ্বালায় সাগর প্রায়ই রাস্তায় ঘোরে। কেউ খাবার দিলে খায়, না দিলে কবরস্থানে গিয়ে কাঁদে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এক মুঠো ভাতের জন্য কত মানুষের কাছে লাথি-গুতা খায়। তারপরও কবরের পাশে গিয়ে বলে; ‘মা, ভাত দাও।’ এটা দেখলে বুক ভেঙে যায়।”
বর্তমানে সাগর যে ঘরে থাকে তা প্রায় ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায়। ঘরটি অস্বাস্থ্যকর, টয়লেট ও পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় কিছু মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করছেন, কিন্তু তার জীবনে কোনো স্থায়ী সমাধান আসছে না।
গ্রামবাসীর দাবি, প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগ নিলে সাগরের জন্য নিরাপদ ঘর, নিয়মিত খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব। এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন, “ওর জন্য একটা পরিষ্কার ঘর আর টয়লেটের ব্যবস্থা করা গেলে অন্তত মানুষের মতো বাঁচতে পারবে।”
সাগরের এই অসহায় জীবন ও তার কবরের পাশে কান্না স্থানীয়দের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তারা আশা করছেন, সমাজের বিত্তবান ও মানবিক মানুষরা এগিয়ে আসবেন—যাতে ক্ষুধার জ্বালায় আর কোনো সাগরকে মা-বাবার কবরের পাশে বসে কাঁদতে না হয়।