
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ রায়ের পর সরকারের শপথ গ্রহণ, গঠন প্রক্রিয়া ও আগামী সংসদ নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, "অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বৈধতা ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। এরপর আর অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ, গঠন ও আগামী সংসদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা সুযোগ নেই।"
এদিন লিভ টু আপিলের শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ আপিলকারীর পক্ষে এবং লেখক ফিরোজ আহমেদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া ইন্টারভেনার হিসেবে অংশ নেন। এছাড়া বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরও ইন্টারভেনার হিসেবে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি পরিচালনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
ঘটনাপ্রবাহটি শুরু হয় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান। আপিল বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণ করেন।
এর আগে, সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে চ্যালেঞ্জ করা হয় রাষ্ট্রপতির অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ক রেফারেন্স এবং সুপ্রিম কোর্টের মতামত প্রক্রিয়া। যুক্তিতে বলা হয়, সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথাগত ব্যবস্থা নেই, তাই রেফারেন্স চাওয়া উপযুক্ত নয়। এছাড়া সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রেফারেন্স প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি।
হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করেন। রিট খারিজের আদেশে হাইকোর্ট উল্লেখ করে, "এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেছেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাই এটি আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছার সমর্থনপুষ্ট।" আদালত আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং তা আগামী প্রজন্মও স্মরণে রাখবে।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে বা হতে পারে, তিনি সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক মতামত নিতে পারবেন। আপিল বিভাগ উপযুক্ত শুনানি শেষে রাষ্ট্রপতিকে মতামত জানাতে সক্ষম।