
ঢাকা-১৭ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, চলচ্চিত্রকার ও সাহিত্যিক শহীদ জহির রায়হান ও অভিনেত্রী সুচন্দার ছেলে তপু রায়হান।
রবিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তপু রায়হান নিজের নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দেন। তিনি নিজের নির্বাচনী ইশতেহারকে ‘ঐকমত্যের ইশতেহার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “আমি কোনো প্রথাগত রাজনীতি করতে আসিনি, বরং সহযোগিতার রাজনীতি চালু করতে চাই।”
ছেলের জন্য দোয়া চেয়ে মা সুচন্দা বলেন, “জয়-পরাজয় থাকবেই। আমার ছেলে যেন মানুষের জন্য, দেশের জন্য, সবার জন্য কাজ করে, সেটাই আমি চাইব। পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছে। হয়তো আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে উনিও খুব খুশি হতেন। মানুষের প্রতি তপুর ভালোবাসা সত্যিই অসাধারণ।”
প্রয়াত লেখক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান নিখোঁজ হওয়ার পর অভাবের মধ্যে গাছের পাতা খেয়ে দিন কাটিয়েছিলেন, এমন কথাই স্মরণ করেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সুচন্দা। তিনি বলেন, “সন্তানদের নিয়ে এমনও দিন গেছে, যখন খাবার জুটত না। তারপরও হাল ছাড়িনি। সন্তানদের মানুষ করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল, তারা বাবার মতো মানবিক ও দেশপ্রেমিক হবে। আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তারা বাবার মতোই হয়ে উঠেছে।”
সুচন্দা আরও জানান, “দেশ স্বাধীন করতে যখন মাঠে নেমেছিলাম, তখন পায়ে জুতা ছিল কি না তা খেয়াল করিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ব। জহির রায়হান রাজনীতি করতেন না, তবে তার লেখনী ও চলচ্চিত্র সব সময় মানুষের ও দেশের কথা বলত। নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের পক্ষে তিনি সবসময় কাজ করতেন।”
সুচন্দা তপু রায়হানের মধ্যে তার বাবার মানবিক গুণাবলীর ছাপ দেখতে পাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, “ছোট ছেলে তপু বাবাকে দেখেনি। তবে তার মধ্যে জহির রায়হানের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। সে সুযোগ পেলেই মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসে। তাই তার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্তে আমি খুশি। হার-জিত থাকবেই, তবে আমার বিশ্বাস সে মানুষের সমর্থন পাবে।”
সংবাদ সম্মেলনে তপু রায়হান জানান, নির্বাচিত হলে সহযোগিতামূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, “এই প্রতিশ্রুতি আমি প্রতিটি প্রার্থীকে দেব। আমি জয়ী হই বা হেরে যাই, নির্বাচনের পর ঢাকা-১৭ আসনের যে কোনো এমপির সঙ্গে একত্রে কাজ করে এলাকার উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে অবদান রাখব। নির্বাচনে জয়ই আমার একমাত্র লক্ষ্য নয়; মানুষের সঙ্গে সংযোগ, তাদের সমস্যা বোঝা এবং অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন মডেল তৈরি করাই আমার উদ্দেশ্য।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ঢাকা-১৭ আসনের গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট, শাহজাদপুর, ভাসানটেক ও মহাখালী এলাকার সমস্যা সম্পর্কে আমার পরিষ্কার ধারণা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কিছু সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছি। নিম্ন-আয়ের মানুষের সমস্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধান করা গেলে তা সারা দেশের জন্য কার্যকর মডেল হতে পারে।”