
বেতন বৈষম্য দূরীকরণ থেকে শুরু করে গ্রেড উন্নীতকরণ—৬ দফা দাবিতে দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা টানা চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি চালিয়ে আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘেরাও করেছেন। বহু বছর ধরে প্রতিশ্রুতি মিললেও কোনো প্রজ্ঞাপন না আসায় তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন তারা। অন্তত পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্য সহকারী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, দীর্ঘদিনের বেতন বৈষম্য, নিয়োগবিধি সংশোধন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদাসহ ন্যায্য দাবিগুলো মানতে কর্তৃপক্ষ বারবার সময় নিলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাদের ভাষায়, “২৭ বছর ধরে আশ্বাসে বেঁধে রাখা হয়েছে, এবার আর ফিরে যাওয়া নয়। আমরা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব। দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া এই সংকটের কোনো সমাধান নেই।”
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যকর কিছুই করেননি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করার সরকারি আদেশ জারি না করা পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়ব না।”
আন্দোলনের কারণে সারা দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এতে সময়মতো টিকা না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন বহু মা ও শিশু।
তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, তারা কখনোই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টিকাসেবা বন্ধ করতে চাননি। বরং কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও বৈষম্যের কারণেই তারা কর্মবিরতিতে বাধ্য হয়েছেন।
মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “যদি দেশের মা-শিশুর টিকা ঝুঁকিতে পড়ে, তার দায় আমাদের নয়। দায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।”
তারা স্মরণ করিয়ে দেন যে বিশ্বে টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে রোল মডেল করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরাই—হাম-রুবেলা, পোলিও, কোভিড, এইচপিভি, টিসিভি সহ বিভিন্ন টিকা পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে গুটি বসন্ত নির্মূল ও শিশু মৃত্যুহার কমানোর পেছনেও তাদের ভূমিকা রয়েছে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, “আমাদের কাজেই দেশের গড় আয়ু বেড়েছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মান পেয়েছে কিন্তু আজও আমরা বৈষম্যের শিকার।”
তাদের ৬ দফা দাবি হলো:
১. নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান।
২. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেড ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান।
৩. পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা।
৪. প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্তি।
৫. বেতন স্কেল পুনর্নির্ধারণে টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল যুক্ত করা।
৬. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান স্বীকৃতি প্রদান।
এর আগে গত অক্টোবরে একই দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। তখন আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করা হলেও কোনো বাস্তব অগ্রগতি না থাকায় তারা আবার কঠোর কর্মসূচিতে ফিরেছেন।