কুড়িয়ে আনা বিচ্ছিন্ন হাত জোড়া লাগিয়ে ইতিহাস গড়লো জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

একটি কলেজ শিক্ষার্থীর দুই হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তা পুনঃস্থাপন করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। কুড়িয়ে আনা বিচ্ছিন্ন হাতের সফল জোড়ায় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিরল এক মাইলফলক তৈরি হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছিল ৯ নভেম্বর গাজীপুরের টঙ্গিতে, যখন খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে যুবক তাসফিন ফেরদৌসের দুই হাত তালু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ তাকে টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। এরপর ছয় ঘণ্টার বেশি সময় লাগার পর তাসফিন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পৌঁছান। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে ছিল।

যদিও সাধারণত বিচ্ছিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নির্ধারিত সময় সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, তবু সহকারী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম শরীফের নেতৃত্বে চিকিৎসক দল ২০ ঘণ্টার পরে তাসফিনের হাত পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হন।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ইনস্টিটিউটের ক্লাসরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এত দীর্ঘ সময় পরে বিচ্ছিন্ন হাতের সফল পুনঃস্থাপন দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিরল এবং এটি বাংলাদেশে প্রথম ধরনের ঘটনা।

ভুক্তভোগী তাসফিন ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আমি কখনোই কল্পনা করিনি আমার সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এই হাত ফিরে পাবো। আলহাম্দুলিল্লাহ ডাক্তারদের চেষ্টা ও আল্লাহর ইচ্ছায় আমার এই হাত সচল হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আশা করছি।"

তাসফিনের মা আফরোজা সুমি বলেন, "আমরা প্রথমে ওর হাতও খুঁজে পাইনি। টঙ্গী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় আনতে এম্বুলেন্সে ওঠার পর ওর হাত খুঁজে পাওয়া যায়। আমি ভাবছি আমার ছেলে আর বেঁচেই থাকবে না। এখন তার হাত যে আগের মতো ভালো হচ্ছে এটা আল্লাহর নেয়ামত আর ডাক্তারদের চেষ্টা। ইনারা এত আন্তরিকতার সাথে দেখবেন আমি ভাবতেও পারিনি।"

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, "শুধু এই ঘটনাই নয়, প্রতিনিয়ত বিচ্ছিন্ন হওয়া অঙ্গ প্রতিস্থাপন করছি আমরা। কিন্তু দেশের মানুষ এই তথ্য না জানায়, অধিকাংশ রোগী আসেন নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। যথাসময়ে সে আসতে পারলে আমরা প্রায় সবাইকেই সুস্থ করে বিদায় দিতে পারছি। আমাদের এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যখনি আসুক তাৎক্ষণিক সেবা মিলবে।"

তিনি আরও বলেন, শরীরের কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসার আহ্বান জানান।