রিকশার নতুন নকশা করেছে বুয়েট, ‘চলবে’ ঢাকায়


April 2025/Ricksha BUET.jpg

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একটি দল রিকশার একটি নকশা তৈরি করেছে। তারা বলছে, ‘এই নকশার রিকশা হবে সাধারণ রিকশার চেয়ে অনেক নিরাপদ। অবশ্য এটি তৈরিতে বর্তমান ব্যাটারিচালিত রিকশার সমান খরচ পড়বে।’

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জানিয়েছে, তারা নতুন নকশা বা মডেলের রিকশা ঢাকার রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেবে। পুরোনো রিকশা পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে তুলে নেওয়া হবে।

নতুন রিকশার নকশা করেছে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. এহসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের গবেষক দল। মো. এহসান বলেন, ২০২২ সাল থেকে তিনি বাড়তি নিরাপত্তাযুক্ত রিকশার নকশা করা নিয়ে কাজ করছেন। অতীতে তিনি সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। তবে কাজ হয়নি।

ঢাকায় এখন দুই ধরনের রিকশা চলে- পায়ে চালিত বা প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত। সাম্প্রতিককালে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এসব রিকশা নিবন্ধনহীন। চালকের প্রশিক্ষণ নেই। তবে গতি সাধারণ রিকশার চেয়ে বেশি। নিরাপত্তা দুর্বল। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহন ঠেকাতে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি; বরং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বুয়েটের নকশা করা রিকশায় যা থাকবে:

বুয়েটের দলটির নকশা করা রিকশা মূলত রাস্তায় চলাচলকারী ইজিবাইকের মতো। দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, রিকশায় ১৬টি বৈশিষ্ট্য যোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা দেশে প্রচলিত ১২ ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশার নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করেছেন। বুয়েটের দলে আরও ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ সালাম আকন্দ ও মো. আমান উদ্দীন, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান খান এবং গবেষণা প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন মো. আসাদুজ্জামান ও আবদুল আজিজ ভুঁইয়া। বুয়েটের দলটির সঙ্গে কথা বলে নতুন নকশার রিকশার বৈশিষ্ট্যগুলো জানা যায়। তাঁরা জানান, রিকশার দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ২ মিটার, প্রস্থ দেড় মিটার এবং উচ্চতা ২ দশমিক ১ মিটার। সব মিলিয়ে আকার হবে এখনকার রিকশার মতোই। রিকশাটি ৩২৫ থেকে ৪২৫ কেজি পর্যন্ত ওজন সহজেই বহন করতে পারবে। ফলে দুজন যাত্রী নিয়ে চালক সহজেই রিকশাটি চালাতে পারবেন।

নতুন রিকশায় ব্রেকিং ব্যবস্থা এখনকার চেয়ে অনেক ভালো হবে বলে জানান বুয়েটের দলটির সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, এর তিনটি চাকায় ‘হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক’ ও বিকল্প ‘পার্কিং ব্রেক’ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

সাধারণ রিকশায় ‘লুকিং গ্লাস’ থাকে না। ফলে রিকশাচালককে পেছনে তাকিয়ে দেখতে হয় কোনো যান আসছে কি না। আবার সাধারণ রিকশায় ‘ইন্ডিকেটর’ নেই। ফলে রিকশা ডানে অথবা বাঁয়ে মোড় নিলে পেছনের যানবাহনের চালকেরা তা বুঝতে পারেন না, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে। নতুন রিকশায় ‘লুকিং গ্লাস’ ও ‘ইন্ডিকেটর’ থাকবে।

নতুন রিকশায় ছাউনি ও কাচের ‘উইন্ডশিল্ড’ থাকবে। ফলে বৃষ্টিতে চালক ও যাত্রীদের ভিজতে হবে না। নতুন রিকশায় কাঠামোর সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত করা হয়েছে হেডলাইট (মূল বাতি), যাতে রাস্তার দৃষ্টিসীমা ঠিক থাকে। নতুন হেডলাইটে ‘হাই বিম’, ‘লো বিম’ ও ‘ডিআরএল’ (ডে টাইম রানিং ল্যাম্প) যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এই বাতি চালককে সড়কে চলাচলের সময় দেখতে এবং রিকশাটিকে অন্য যানবাহনের চালকের দৃষ্টিগোচর করতে সহায়তা করবে।

তৈরির খরচ কেমন:

বুয়েটের দলটি নতুন নকশার রিকশা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরিতে খরচ কত হতে পারে, তা জানার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা জানতে পেরেছে, দাম হতে পারে দেড় লাখ টাকার আশপাশে।

বুয়েটের দলটি যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তাদের একটি বিভাটেক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘রিকশাটির ব্যাটারির জন্য খরচ হবে ৫০-৬০ হাজার টাকা। বাকিটা কাঠামোর খরচ। সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকায় এই রিকশা বিক্রি করা সম্ভব।’

সাইদুর রহমান আরও বলেন, ‘ব্যাটারি এক বার চার্জ দিলে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে পারবে নতুন রিকশা। দেড় বছর পরপর ব্যাটারি পরিবর্তন করা লাগবে। পুরোনো ব্যাটারিগুলো ‘রিসাইকেল’ (পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী) করা হয়। কোম্পানিগুলো পুরোনো ব্যাটারি আবার কিনে নেয়।’

গতি কত:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পায়ে চালিত রিকশা ঢাকায় ঘণ্টায় ১০-১২ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। তবে তাতে মোটর লাগিয়ে ৩০ কিলোমিটার গতি ওঠানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

মো. এহসান বলেন, ‘পায়ে চালিত রিকশার কাঠামো ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলার জন্য শক্তিশালী নয়। এটায় যে ব্রেক ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, তা সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’

নতুন রিকশায় সর্বোচ্চ গতি ওঠানো যাবে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। তবে এর তিনটি চাকায় ‘হাইড্রোলিক ব্রেক’ ব্যবহার করার কারণে তা নিরাপদ বলে জানান এহসান।

কবে থেকে চালু:

বুয়েটের দলের করা রিকশা রাস্তায় নামাতে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, ‘রিকশার চালকের জন্য লাইসেন্স ও রিকশার নিবন্ধনের (রেজিস্ট্রেশন) ব্যবস্থা থাকবে। আমরা খুব দ্রুতই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রিকশাচালকেরা আবেদন করলে আমরা তাঁদের নম্বর প্লেট দেব।’

মোহাম্মদ এজাজ আরও বলেন, ‘সরকার নির্ধারণ করে দেবে কোন কোন এলাকায় রিকশা চলতে পারবে। পুরো ঢাকা শহর ঘোরার অনুমতি দেওয়া হবে না। রিকশাভাড়াও সরকার নির্ধারণ করে দেবে।’

বর্তমানে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটির প্রশাসক বলেন, ‘আমরা খুব ধীর প্রক্রিয়ায় এগুলোকে সরিয়ে ফেলব।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×