
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তরফ থেকে ‘দুয়েক দিনের মধ্যে’ নির্বাচনি জোট গড়ার ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দল দুটির নেতারা। এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে ৩০ আসন নিয়ে সমঝোতা হওয়ার গুঞ্জন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর পর দল দুটির পক্ষ থেকে এমন আভাস এল।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “তারুণ্যের রাজনীতির কবর রচিত হতে যাচ্ছে। এনসিপি অবশেষে জামায়াতের সঙ্গেই সরাসরি জোট বাঁধতেছে। সারা দেশে মানুষের, নেতাকর্মীদের আশাআকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে গুটিকয়েক নেতার স্বার্থ হাসিল করতেই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
“সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল এই জোটের ঘোষণা আসতে পারে। আর এর মধ্য দিয়ে কার্যত এনসিপি জামায়াতের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।”
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা পর থেকেই শাপলা কলি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে এনসিপি। ইতোমধ্যে তারা শতাধিক আসনে প্রার্থীও ঘোষণা করেছে।
এছাড়া গেল ৭ ডিসেম্বর এনসিপির নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে তিন দলের ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’। এ জোটের বাকি দুই দল হলো এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
সেই জোট গঠনের তিন সপ্তাহ না যেতেই জামায়াতের সঙ্গে দলটির আসন নিয়ে দর কষাকষি হওয়ার খবর এলো।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “এনসিপির সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই জোট গঠনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এখন দেখা যাক কি হয়, জোট হলে আপনাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
এদিকে ফেইসবুক পোস্টে জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে নির্বাচনি জোট হওয়ার আভাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ।
তিনি লেখেন, ৩০ আসনে এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে জোটে গেলে ব্যাপারটা ‘আত্মঘাতী’ হবে। এখন পর্যন্ত এনসিপি-জামায়াতের আসন সমঝোতা হচ্ছে না, যা হচ্ছে সেটা নির্বাচনি জোট। জোটের নমিনেশনের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না।
জোট বাঁধার গুঞ্জন সম্পর্কে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “এখনও আলোচনা হচ্ছে, চূড়ান্ত কিছু হয় নাই। “
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছেন, জোট গঠনের ঘোষণা ‘দুয়েক দিনের মধ্যেই’ আসতে পারে। তিনি বলেন, “এখনও আমাদের বিষয়টা ইয়ে… হয় নাই। বিষয়টা অফিসিয়ালি ঘোষণা হবে। কবে নাগাদ ঘোষণা আসতে পারে জানতে চাইলে আদীব বলেন, “জোট হলে এক-দুই দিনের মধ্যেই হবে, না হলে নাই।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের হাত ধরে গড়ে ওঠা এনসিপির সঙ্গে এর আগে নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদের একীভূত হওয়ার আলোচনা উঠেছিল। কিন্তু একীভূতের পর নেতৃত্ব কেমন হবে, সেই মতবিরোধে আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি।
গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর গত অক্টোবরে এনসিপিসহ নয়টি দল নিয়ে ভোটকেন্দ্রিক একটি জোট গঠনের আলোচনা সামনে আসে।
সেই জোটে গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি বা এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও জেএসডির (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) নামও শোনা যায়। কিন্তু এই জোটও শেষমেশ আলোর মুখ দেখেনি।