
দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরার পর প্রথম বড় কর্মসূচি হিসেবে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করা হয়েছে এবং চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে।
তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি ও উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, কর্মসূচিকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই এলাকায় অবস্থান নেবেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা-১৯ আসনে দলীয় প্রার্থী ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু বলেন, “দীর্ঘ ১৭ বছর পরে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারক রহমান। তিনি শুক্রবার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন।” তিনি আরও জানান, এ সময় সাভার ও আশুলিয়া মিলিয়ে প্রায় এক লাখ নেতাকর্মী উপস্থিত থাকতে পারেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার খান আনু জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আগমনকে সামনে রেখে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অনেক মানুষ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আসবে। তবে, সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে কি না, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সকালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।”
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক, ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আরাফাতুল ইসলাম বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসবেন। সে কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারেক রহমান নিজ বাসভবন থেকে প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গিয়ে বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। এরপর তিনি সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরেন তারেক রহমান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে একটি বিশেষ বাসে করে তিনি ৩০০ ফিট এলাকায় প্রস্তুত করা সংবর্ধনা মঞ্চের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর তিনি মঞ্চে পৌঁছান।
দেশে ফেরাকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দেখা যায়। সংবর্ধনা মঞ্চে উঠেই হাত নেড়ে উপস্থিত জনতার শুভেচ্ছার জবাব দেন তারেক রহমান। বক্তব্যে তিনি একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা তুলে ধরেন।
সমাবেশে জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা মার্টিন লুথার কিং-এর নাম শুনেছেন। তিনি বলেছিলেন, আই হ্যাভ এ ড্রিম। আমি আপনাদের সকলের সামনে দাড়িয়ে আমি বলতে চাই- আই হ্যাভ এ প্লান। ফর দি পিপল অব মাই কান্ট্রি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এটি আমরা বাস্তবায়ন করব।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশের প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা লাগবে। এজন্য আপনারা পাশে থাকবেন। সেটা হলেই কেবল আমরা সেই ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।”
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। এক বছর কারাভোগের পর ২০০৮ সালে তিনি মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছিলেন।
দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে দেশের আকাশসীমায় প্রবেশের পর তারেক রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “দীর্ঘ ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!”