
একদিনে কমপক্ষে ৬৫ জন ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে ইসরায়েলি হামলায়, যেটি গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতের ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শহরের স্কুল, বাড়িঘর ও শরণার্থী শিবিরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামলার ভয়ে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে পালিয়ে যাওয়া হাজারো মানুষ চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের টানা হামলায় গাজা জুড়ে মৃত্যু ও ধ্বংসের চিত্র আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বুধবার রাত পর্যন্ত, দিনের বিভিন্ন সময়ে চালানো হামলায় অন্তত ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। তবে এই সহিংসতা বন্ধে কোনো লক্ষণ এখনো দৃশ্যমান নয়।
এদিকে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, হামাস তা গ্রহণ করবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
বুধবার গাজা শহরের জায়তুন এলাকায় অবস্থিত আল-ফালাহ স্কুলে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়া এই স্কুলে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ অবস্থান করছিলেন। হামলার পর পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। তবে উদ্ধারকাজ শুরু করার সময় আরও একটি হামলা হলে কয়েকজন কর্মী গুরুতর আহত হন।
আহতদের মধ্যে মুন্তাসির আল-দাহশান নামের একজন পরে মৃত্যুবরণ করেন। আল-আহলি আরব হাসপাতাল জানায়, ওই ঘটনায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
একইদিন দারাজ মহল্লার একটি বাড়িতে চালানো হামলায় সাতজন নিহত হন। এছাড়া জায়তুনের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে আরেকটি হামলায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গাজা সিটির বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বুধবার নিহত ৬৫ জনের মধ্যে ৪৭ জনই গাজা শহরের বাসিন্দা।
গাজার সবচেয়ে বড় এই শহরটিতে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থামছে না। প্রতিদিনই নতুন করে ভবন ধ্বংস হচ্ছে, প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক মানুষ। হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তবে সেসব রাস্তাও নিরাপদ নয়। পালানোর পথেও হামলার ঘটনা ঘটছে।
এই পরিস্থিতিতে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) জানিয়েছে, গাজা সিটিতে তাদের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এর আগেই মেডিকেল এনজিও ‘ডক্টরস উইদআউট বর্ডারস’ (এমএসএফ) একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে রেড ক্রস জানিয়েছে, দক্ষিণের দেইর আল-বালাহ ও রাফাহ অঞ্চলের অফিস থেকে তারা এখনো কিছু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী আল-রাশিদ সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে। এটি উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। ফলে হাজারো মানুষ এখন এই সড়ক ব্যবহার করে চরম ঝুঁকি নিয়ে গাজা ছাড়ছেন।
গাজা সিটির পশ্চিমে অবস্থিত আল-শিফা হাসপাতালও অব্যাহত হামলার মুখে রয়েছে। হাসপাতালের প্রাঙ্গণে অজ্ঞাত পরিচয়ের ১১ মরদেহ একসঙ্গে গণকবরে দাফন করা হয়েছে। হাসপাতালের ভেতরে থাকা কিডনি রোগীরাও বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন।