
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় শক্তিশালী বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন শিশু শিক্ষার্থী ও এক অটোচালকসহ অন্তত চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের তীব্রতায় মাদ্রাসা ভবনের একটি দেয়ালের অংশ উড়ে গেছে এবং আশপাশের স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে হাসনাবাদের ‘উম্মুল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা’ ভবনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের প্রচণ্ডতায় একতলা মাদ্রাসা ভবনের জানালার কাঁচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, দেয়ালের একাংশ ছিটকে দূরে পড়ে এবং ভেতরের আসবাবপত্র এলোমেলো হয়ে যায়। একই সঙ্গে পাশের মোহাম্মদ হোসেনের মালিকানাধীন ভবনও ক্ষতির শিকার হয়।
ঘটনার সময় মাদ্রাসার সামনে থাকা অটোচালক জাকির হোসেন (৪৫) মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জাকির হোসেন বলেন, “হঠাৎ বিকট শব্দের সঙ্গে একটি ইট এসে আমার মাথায় লাগে। মুহূর্তেই চারপাশ ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়।”
এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষক আলামিনের দুই ছেলে উমায়েদ (১০) ও আবদুল্লাহ (৮), মেয়ে রাবেয়া (৬) এবং সিএনজি গ্যারেজ শ্রমিক জাকির হোসেন (৪৫)। আহত শিশুদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, “ঘটনাস্থলে গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত পাওয়া গেছে। এটি নিশ্চিতভাবেই গ্যাস বিস্ফোরণ নয়। ভবনের ভেতরে থাকা কোনো কেমিক্যাল থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।”
বিস্ফোরণের কারণ ও উৎস নির্ণয়ে র্যাব ও সিআইডির বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে জানানো হয়েছে। আলামত সংগ্রহ শেষে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভবনের মালিক পারভিন বেগম জানান, ২০২২ সালে নির্মাণ শেষ হওয়ার পর মুফতি হারুন নামের এক ব্যক্তি মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য ভবনটি ভাড়া নেন। সেখানে শিক্ষক হিসেবে আলামিন ও তার স্ত্রী আছিয়া বসবাস করতেন। মুফতি হারুন মাঝেমধ্যে মাদ্রাসা পরিদর্শনে আসতেন এবং গত তিন বছর ধরে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছিল। তবে ভেতরে কোনো দাহ্য পদার্থ বা কেমিক্যাল রাখা ছিল কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষা কার্যক্রমের আড়ালে ভবনটিতে অন্য কোনো কার্যক্রম চলছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।