
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর তা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে বড় শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপে গেল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সোয়া ছয় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুদকের চট্টগ্রাম-১ কার্যালয়ে করা এসব মামলায় গ্রুপটির কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং জনতা ব্যাংকের অন্তত ৮৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ঋণের নামে অর্থ উত্তোলন করে তা সুদসহ ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, তিন প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণের মোট পরিমাণ ৬ হাজার ২৪৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩ হাজার টাকা।
মামলার নথি অনুযায়ী, প্রথম মামলাটি এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডকে ঘিরে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৬ মার্চ পর্যন্ত সময়ে জনতা ব্যাংক থেকে বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে সুদে-আসলে ২ হাজার ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৩০৮ টাকা ২৩ পয়সা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ মামলায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফারজানা পারভীনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম দ্বিতীয় আসামি, সঙ্গে জনতা ব্যাংকের ২৮ জন কর্মকর্তা অভিযুক্ত।
দ্বিতীয় মামলাটি এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড সংক্রান্ত। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ঋণ নিয়ে সুদে-আসালে ২ হাজার ২৯৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ টাকা ৫ পয়সা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এতে সাইফুল আলমকে প্রধান আসামি করা হয়েছে এবং জনতা ব্যাংকের ২৫ জন কর্মকর্তা রয়েছেন সহ-আসামি।
তৃতীয় মামলায় এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে ২০০৫ সালের ১০ মে থেকে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ঋণ গ্রহণ করে সুদে-আসালে ১ হাজার ৯৪২ কোটি ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৩ টাকা ৬১ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় মোট ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, ঋণ অনুমোদন, বিতরণ ও পরিশোধ তদারকির প্রতিটি ধাপে কীভাবে অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে, তা তদন্ত করে বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হবে।
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর সুগার মিল ও সুপার এডিবল মিলের নামে ৩ হাজার ৮৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিল দুদক। সর্বশেষ এই তিন মামলার মাধ্যমে গ্রুপটির বিরুদ্ধে তদন্তের পরিধি আরও বিস্তৃত হলো।